Saturday, December 19, 2015

রহস্য গল্প-- নীলার নীল ডায়রি

শীতের সকাল বেশ কুয়াশা পড়ছে অরন্য কুয়াশার জন্য ঠিক মতে গাড়ি চালাতে পারছে না । এমনিতে সারারাত ঘুমাই নি। রাত ৮ টায় রাঙ্গামাটি থেকে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছে রাস্তার অবস্তা ভাল না সস্কারের কাজ চলছে । অরন্যের চোখের বাতি নিভু নিভু করছে। কিন্তু এখন আর ঘুমিয়ে কাজ নেই। ভাবছে নাস্তাটা করে নিবে রাস্তার কোন হোটেল থেকে । মানি ব্যাগ টা পকেটে নিয়ে গাড়ি থামালো কুমিল্লার ময়না মতির কাছে একটা হোটেলে । শীতের সকাল। রাস্তা ঘাটে লোক জন তেমন নেই। দোকান গুলো এখনো খোলেনি।অরন্য আলী হোটেলের দিকে হাঁটছিল । ঘুমের কারনে চোখ খোলা রাখতে পারছি না। ভাল করে চোখে মুখে পানি দিয়ে নাস্তা করে তিন কাপ চা গ্লাসে ঢেলে নীল । চা শেষ করে আবার গাড়ি ছাড়লো । ভোর তখন প্রায় ছয়টা । কুয়াশার মধ্য কিছু বুঝে উঠার মনে হল গাড়িতে কেউ ধাক্কা খেয়েছে । গাড়িটা থামালো । পিছনে একটু দূর হাঁটার পর দেখলো ফুপিয়ে কাঁদছে। যাক বাবা বেঁচে আছে । নীল রঙের শাড়ি পরা একজন মহিলা । --কি খুব বেশি ব্যথা পেয়েছেন / - না সাইড গ্লাসের বারি ছিল । -- রাস্তা দেখে পার হবেন না । -- আরে রাস্তা পার হতে চাই নাই । বাস মনে করে হাত দেখিয়ে ছিলাম । অরন্যের গা দিয়ে যেন ৪৪০ ভোল্ট এর বিদ্যুৎ ছুঁয়ে গেলও। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।এ তো আকাশ থেকে নেমে আসা নীল পরী । মনে মনে বললো পরী তোমার ডানা গুলো কোথায় ? মেয়েটি কান্না ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির চোখে কিছু একটা আছে। অদ্ভুত এক মায়া যা দেখলে মনে হয় বুকের ভেতর কোথায় যেন এক আদ্ভুত শূন্যতা সৃষ্টি হয়। মেয়েটিকে আবার জিজ্ঞাস করলো ঃ- কাঁদছেন কেন? ব্যথা তো পান নাই মেয়েটি কিছু বলল না। ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অরন্য দাড়িয়ে আছে । মনে হচ্ছে মেয়েটি ভয় পাচ্ছে। অবশ্য ভয় পাবারই কথা। সারা রাত ঘুমাই নি। চোখ লাল টমেটো হয়ে আছে। চেহারার ১২ টা বেজে আছে। অরন্য বলল - আপনি কি কোনো সমস্যায় পরেছেন ? এখনে বসে এভাবে কাঁদছেন না মেয়েটি অরন্য অবাক করে দিয়ে বললঃ আমাকে একটু আপনার সাথে নিতে পারবেন? অরন্য ভ্যবচেকা খেয়ে গেল । মনে মনে এটাই ভাবছিল । অরন্য বলল--- পারব। আপনার সাথে কি কেউ নেই? ঃ না। ঃ ঠিক আছে আপনি একটু সামনে আসেন ওই খানে আমার গাড়ি আছে। মেয়েটি উঠে বসলো গাড়িতে । অরন্য নীরবতা ভেঙ্গে মেয়েটিকে জিজ্ঞাস করলো ? ঃ আপনার নাম কি? মেয়েটি মুখ তুলে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। হঠাৎ মেয়েটি বলে উঠলঃ আমি নীলা । আমার বাসা ঢাকা । বান্ধবির সাথে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম এখানে বাস থেকে নেমেছিলাম। কারন আমার এক বন্ধু এখানে থাকবে বলেছিল । অরন্যঃ আপনার সাথে মোবাইল নেই। ঃ না। আমি মোবাইল ব্যবহার করি না। ঃ আপনার বাবার মা কারো ফোন নাম্বার আছে? ঃ আমি নম্বর মনে রাখতে পারি না। ঃ তো এখন কি করবেন? ঃ জানি না। মেয়েটি আবার ফুপিয়ে কান্না শুরু করল। ঃ আচ্ছা আপনি কান্না থামান। আপনি কাঁদবেন না। প্লীজ। আপনার বাসার ঠিকানা জানেন? ঃ জানি। ঃ ঠিক আছে আমি আপনাকে ওখানে পৌছে দিয়ে আসব। আপনি চিন্তা করবেন না। ঃ আপনি কিছু খেয়েছেন? ঃ না। ঠিক আছে সামনে থেকে নাস্তা করেন। তার পর আমার রওনা দিব। মেয়েটি বলল থাক নাস্তা করবো না। আমার একটা উপকার করবেন । ঃ- হ্যা কেন করবো না। আপনি যে বেঁচে আছেন । মরে গেলে তো সারা জীবন আপনার জন্য দুঃখ পেতাম ঃ- আসলে এক সময় আমরা সবাই মরা যাব । কেউ আগে কেউ পরে । ঃ- আপনার কি উপকার করবো বলুন । যে কুয়াশা সামনে গাড়িতে কিছুই দেখা যায় না। ঃ- আমি আসলে বাসা থেকে না বলে চলে আসছিলাম । আমার বান্ধবির বাড়িতে । আপনি ঃ- আমার আব্বু কে বলবেন আমাদের ঘরে পুরাত বুক সেলফে আমার একটা নীল রঙের ডাইরি আছে । ডাইরি টা পরে যদি আমাকে ক্ষমা করে তাহালে আপনি বলবেন - আমার ঠিকানা মতে চলে আসতে । আমার ঠিকানা লিখা আছে বুক সেলফের ১১৩ নং বইয়ের ১১৩নং পাতায় । ঃ- না আমি সামনে নেমে যাব । যদি আপনি আমার এ কাজ করে দেন তাহালে আপনি আব্বুর সাথে চলে আসবেন । আমাকে মেঘ নার টুল প্লাজায় নামিয়ে দিয়েন । আব্বু আসলেই ঢাকা যাব অরন্য ভাবছে ভালই হোল জীবনে এমন একটা মেয়ে সে খুজছিল শান্ত ও নরম । মেয়েটি আরামে ঘুমাচ্ছে। অরন্য তাকিয়ে আছে নীলা মেয়েটি দিকে। কি নিস্পাপ মুখ। ঘুমন্ত মানুষ কে দেখতে নিস্পাপ লাগে। মেয়েটি দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে আদ্ভুত এক মায়ার জালে আটকা পরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই মেয়েটির প্রেমে পরে গেছে। জানি না এমন কেন মনে হচ্ছে। মেয়েটি হতাৎ বলল থাক আমাকে ঐ বাসস্টপে নামিয়ে দিন । আমার বাসার ঠিকানা লিখে নিন । অরন্য মেয়েটিকে তার মোবাইল নাম্বার লিখে দিল । ঠিকানা লিখে নীল । মেয়েটি নেমে গেল । অরন্যের ঘুম হাড়িয়ে গেল ।পাক্কা দু ঘণ্টা । এর মধ্য কত কি ? যাই হোক বিকেলে একটা লম্বা ঘুম দিয়ে উঠে বিকেল ৪ টায় । নীলার বাসার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল বাজালো । এটা মাঝ বয়সী মহিলা দরজা খুলে দিলো। চেহারা একদম নীলার মত। অরন্য বলল -আপনি নিশ্চয় নীলার মা । মহিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। কয়েক মুহূর্ত পর উনি বলল “তুমি নীলা কে কী ভাবে চেন? অরন্য বলল নীলার সাথে কি ভাবে দেখা হয়েছে । উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমাকে কিছু না বলে উনি ভিতরে চলে গেলেন। অরন্য বোকার মত দাড়িয়ে রইলো । এর মধ্য অরন্য কে ডাক দিলেন। অরন্য কে একটি ছবি দেখালো । ছবিটি নীলার । ঃ তুমি কি ওর কথা বলছ? ঃ জি ওর কথা বলছি ঃ- ঠিক আছে বাবা ভিতরে এসো । নীলার মা কাঁদছে আর বলছে তাহালে আমার মেয়ে বেঁচে আছে । তুমি তাকে দেখেছ । নীলার বাবা কি বোকার মত কান্না করছ । কে বাবা তুমি । আমার মেয়ে মারা গেছে ৭ বছর হল । আমি তাকে নিজের হাতে লালমাই পাহারের পাশে এক গ্রামে মাটি দিয়ে এসেছি । কে বা কারা জানি ওকে মেরে রাস্তায় ফেলে গেছে । আমরা টা জানি না। মামলা টা সি আই ডি তে আছে । অরন্যের সারা শরীর আবার যেন ৪৪০ ভোল্ট এর বিদ্যুৎ ছুঁয়ে গেলও। বলেন কি ? আমি যে আজ ভোরে আমার সাথে ঢাকা আসতে চাইলো । নীলার বাবা বলল তোমার মত একজন বছর খানেক আগে একবার তোমার মত বলেছিল । যখন শুনল সে মারা গেছে তখনেই সে তাড়াতাড়ি চলে গেল । আমাকে কি জানি বলতে চেয়ে আর বলল না । না বলেই চলে গেল । অরন্য বলল - আপনি জানেন না নীলা কিভাবে মারা গেল । কার সাথে চলে গেল । নীলার বাবা বলল - নিনা খুব কম কথা বলত । ও ছিল শান্ত স্বভাবের । আমরা জানতেই পারি নাই কে তাকে নিয়ে গেল । তবে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে । অরন্য বলল- আপনার ঘরে পুরাতন বুক সেলফ টা কোথায় । আমাকে নিয়ে জান । অরন্য চেয়ে আছে শত শত বই। একটা একটা করে খুঁজে লাগলো নীল রঙের ডাইরি । পেয়ে গেল । নীলার বাবাকে ডাইরি টা দিল । আবার সে খুঁজতে লাগলো ১১৩ নং বই । পেয়ে গেল । ১১৩ নং পাতায় দেখতে পেল একটা চিঠি ,ঠিকানা ও ফোন নাম্বার সব দেয়া আছে । নীলার বাবা ডাইরি পড়ছে আর কাঁদছে । নীলার মা ফোন করে সি আই ডি কে জানালো । তিন মাস পরে সেই ঘাতক পুলিশে ধরা পড়লো । মাঝে মধ্য অরন্য আসে নীলার বাসায় । আজ অরন্য নীলার বাবাকে নিয়ে সেই লাল মাই পাহারের কাছে গেল । নীলার কবরে একটা বকুল ফুলের গাছ লাগালো । চারা বকুল গাছ কিন্তু কয়েকটা বকুল ফুল আছে । বেশ কিছু দিন পরের কথা অরন্য ঘুম থেকে উঠে দেখে তার বিছানার বালিশের পাশে কিছু বকুল ফুল ..............................।।

Tuesday, December 8, 2015

কুয়াশার প্রথম রোদ

---------------------------- সেলিনা জাহান প্রিয়া ১ আজ প্রথম রোদ দেখলাম কুয়াশার ডুব দিয়েছে জানালা খুলে শীতল বাতাসে রোদ উকি দেয় ঘুমে প্রেম নয়, নতুন বউ লাজুক চাহনিতে সূর্যদয় আজ আলোর অভাব পড়েছে কুয়াশার উম চাদরের গায়ে । ২ তুমি এলে না! অভিমানী মন আমার আমিও যাব না এক পা দু পা করে বাড়ির সামনে দিয়ে পথিক যায় নিদারুণ সত্যি যে তুমি আজও আসলে না পথ ভুলে কাজল আঁখি পথ চেয়ে থাকে কুয়াশার অন্ধকারে ! ৩ আমি আজ খুব ভোরে শিউলি ফুলের মালা বানাবো কোন উষ্ণতা নয়,একমুঠো ভালবাসায় এ পথে এসো আমার মালায় থাকবে কিছু শিশির আর কুয়াশার রঙ সত্যি,যদি রোদ উঠে শিশির হাসবে কুয়াশা পালাবে ।। ৪ তুমি আসবে কি না জানি না তবুও শীত আসে শিমুল বনে কত ফুল ঝরে পথিকের পায়ে পায়ে আমি হয়ত তেমন ফুল পথিক তুমি যদি এই বন ফুল না চেন টা কি আমার ভুল তুমি আসবে ভেবে কত দিন আমি ঝরেছি বকুল হয়ে । ৫ আমার চুল আমার আলতা রাঙা পা মেহেদী মাখা হাত ধীর ধীরে কুয়সায় ঝরে পড়ে কিছু রেশমি চুড়ির শব্দ নুপুরের নিক্কনে ময়ূরীর পথ চলা কুয়াশার নীল চাদরে পথিক তুমি রোদ হয়ে এসো আমার বকুল তলের ছায়াতে । ৬ আমি দেখি পথিক তোমার পদ চিহ্ন ধুলায় মেখে থাকে সেই পথে চেয়ে থাকি কত মায়া সুধা চোখের কাজল পড়ে অনুরাগী প্রেমিক তুমি অনুরাগে ছুয়াও তোমার মায়া আমি না হয় ঘর কোনে লুকিয়ে দেখি রোদের পথ চলা । ৭ পথিক সময় চলে যায় সময়ের নিয়মে মহাকালে পথে তুমিও চলে যাও কিছু না বলে একটু আঁখির পলক দিয়ে চোখের ভাষায় তুমি আলো জ্বেলে দেখে নাও কুয়াশার প্রান যে পথে শিমুল বকুল ঝরে তাতে লিখা আছে কত মনের গান । ৮ তুমি যত বার স্পর্শ করো শীতের ঝরে পরা কুয়াশার শিশির তাতে মিশে আছে ঘর কোনে কিশোরী মেয়েটির আঁখি জল ঠোঁটে তাঁর লাজুক হাসি নাকে তাঁর লবণাক্ত জল ছবির বিন্দু ভাগ্যিস প্রেম হৃদয়ে গভীর হয় তাই ঠোঁট মুছে চুপ থাকা যায় । ৯ “ভালোবাসি” তোমার জন্য বরাদ্দ আছে গভীরতম বিশ্বাস ভালোবাসি” আত্মসমর্পণ করলাম তোমার কাছে বিশ্বাসে “ভালোবাসি” চাইলে ভালোবাসা নিতে পারো সবটুকু বিশ্বাসে “ভালোবাসি” আজ প্রথম রোদ দেখলাম কুয়াশার পথিক হৃদয়ে ।

Friday, December 4, 2015

মানুষ জন্মত যাযাবর ---------------------

------------ shelina jahan priya অচেনা পথে হেঁটে যাওয়া অজানার মাঝে আমিও একজন কত শত ফালং পথ দিয়েছি পারি জাফলং থেকে নিঝুম দ্বীপ। শুধু দু পায়ে হেঁটে চলেছি ছুটে, এক অজানা মায়ার বাঁধনে , গ্রীষ্ম থেকে শীত বর্ষার জলে পথ একলা পাড়ি দিয়েছি আমি। শুধু একটা নক্ষত্র আমি দেখছি কপ্তাইয়ের শীতল নীল জলে পাহারের চূড়ার উপর সে ডাহুকের গানে তাঁর সুর ছড়িয়েছে আমি দখিনের বাতাসে ছেড়েছি সাম্পানের তরী তাঁর ঘাটে শান্ত জলে ঢিল ছোড়ার আগে বুঝিনি তরঙ্গ আছে অনুভূতে । খেয়ালীপনায় অস্তিত্বের যোগ বিয়োগে অপ্রাপ্তির খোলসে মুড়ে তৃণ লতার নির্জনতার বাউলের গানে মাঝে আমিও একজন জলহীন খরায় শুষ্ক দু-নেত্রের ছদ্মবেশী সময়ের পথিক আমি মন সুখে ডুব দেই তিরতির কাঁপা শ্যাওলার আয়নার জলে। পথিকের উল্লাসের উনুনে ধোঁয়া জোটেনা, উড় শুধু ছাই বনফুল,থরে থরে আলোর সোপানে কিছু ভেজা জোৎস্না আমি গৃহত্যাগী,সন্ন্যাসী হয়ে নয়,পৃথিবীর একজন পথিক হয়ে আমি স্তব্ধ মৃত্তিকার সুপ্তানলে জেগে উঠি চিৎকারে পস্প কানুনে । ঘুড়ির শোকে আকাশ খেলেনা পুড়ছে যে নাটায়ের । আমি খেয়ালী, হেঁয়ালি, পৌষালী ঝরা পাতার গল্প হয়ে ঘুরে বেড়াই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বদলেছি যত অন্ধকারের জীবনের জন্য আমার পৃথিবীর খুব অল্প সময়ের অতিথি হয়ে জন্মত যাযাবর মানব জীবন শিমুলের মত সুন্দর হয়ে সবাই ফুটে সময় শেষে ঝরে পারে মাটিতে ।