Saturday, May 30, 2015

নিঝুম দ্বীপ

সমুদ্রকোলে অস্তগামী সূর্য। কেওড়া বন থেকে দলবেঁধে ঘাসবনে ছুটে আসছে মায়াবী চিত্রা হরিণ। দূর বালুচরে চিক চিক খেলা করছে মিষ্টি সূর্যরশ্মি। কেওড়া-গেওয়া বনের কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া সরু খালের পাড়ে সবুজের আচ্ছাদিত নকশিকাঁথার মাঠ। ওপরে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির ওড়াওড়ি। বনে পাখির কিচিরমিচির। নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অর্ন্তগত নিঝুম দ্বীপ। একে 'দ্বীপ' বলা হলেও এটি মূলত একটি 'চর'। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন মূলত বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চুর মুরি- এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ১৪,০০০ একরের দ্বীপটি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত কোনো লোকবসতি ছিলো না, তাই দ্বীপটি নিঝুমই ছিলো। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২,০০০। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবী করেন।
নিঝুম দ্বীপ বা বাইল্যার ডেইল বা বাল্লারচর যে নামই হোক না কেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের দিয়ারা জরিপ বিভাগ এই দ্বীপের জমি চর ওসমান মৌজা হিসেবে জরিপ করে। কথিত আছে সর্দার ওসমান নামের এক সাহসী বাথানিয়া ১০০ মহিষ নিয়ে প্রমত্তা মেঘনা পাড়ি দিয়ে প্রথম এই দ্বীপে অসে এবং দিয়ারা জরিপ কর্মচারীদেরকে জরিপ কাজে প্রভূত সহায়তা করে বিধায় তার নামে অনুসারে নিঝুম দ্বীপে মৌজার সরকারী নাম হয় চর ওসমান। ৭০ এর ১২ নভেম্বর প্রলয়কারী ঘূর্ণিতে সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। বিরান হয়ে যায় জনপদ। স্বাধীনতা পর বন বিভাগ এর দায়িত্ব নেয় এবং শুরু করে বনায়ন। সমগ্র নিঝুম দ্বীপের প্রায় ৩০০০.০০ একরে মানুষের বসতি রয়েছে এবং অবশিষ্ট অংশে ম্যানগ্রোভ বনায়ন রয়েছে। ইছামতির দ্বীপ বা বাইল্যার ডেইল বা বাল্লারচর বা চর ওসমান যে নামেই স্থানীয় ভাবে প্রচলিত হোক না কেন - ১৯৭৪ সালে হাতিয়ার তত্কালীন সাংসদ এবং যুব, ক্রীড়া ও বন প্রতিমন্ত্রী মরহুম আমিরুল ইসলাম ওরফে কালাম দেশী-বিদেশী পর্যটকদের চর ওসমানে নিয়ে যান এবং অবাক বিষ্ময়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে সবাই অবলোকন করলেন এর শান্ত স্নিগ্ধ রূপ এবং এই দ্বীপের নাম দিলেন নিঝুম দ্বীপ। সেই থেকে নিঝুম দ্বীপ হিসেবেই এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।




মাছ, পশু, পাখি ও উদ্ভিদ
নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। হরিণের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০ (প্রেক্ষাপট ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ)। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুঁকোয়। এই স্থানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। এখানে রয়েছে মারসৃপারি নামে একধরনের মাছ যাদেরকে উভচর প্রাণী বলা হয়। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার, ৬-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ কিনতে আসে।। এছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এই মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। এই শুঁটকি মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের কাছে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে। আবার এই শুঁটকি হাঁস-মুরগীর খাবারেও ব্যবহার করা হয়। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে কেওড়া গাছ। ইদানিং বনবিভাগ কিছু নোনা ঝাউও রোপন করছে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ।

নদী কর্ণফুলীর -কাহিনী


বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তীর্ণ জনপদের প্রাণপ্রবাহ বলতে গেলে কর্ণফুলী নদী। যেটি ভারতের লুসাই পর্বতমালার পাদদেশ থেকে বেয়ে রূপসী কর্ণফুলী পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে চট্টগ্রামের বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। বহু বন্ধুর পথ পেরিয়ে আসা কর্ণফুলী চট্টগ্রামের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে উপজীব্য হয়েছে। এই কর্ণফুলীর নামকরণ নিয়ে রয়েছে লোকগাথা, উপকথা, রূপকথা।আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। প্রাচীন কালের সেই রাজার ছিলো একটি মাত্র কন্যা। সেই কন্যাকে রাজা ভালবাসতো ভীষণ। এই কন্যা হাসলে সূর্য উঠতো, কাঁদলে বৃষ্টি নামতো। হাঁটলে বাতাস বইতো, তাকালেই ফুল ফুটতো। এই অপরূপা রাজকুমারী গোসল করতো পাহাড়ি ছড়ার জলে। ঝিরঝিরিয়ে বয়ে যেতো ছড়ার জল। একদিন নদী বেয়ে এক সওদাগর এলো। যুব সওদাগরের নধরকান্তি দেখে রাজকন্যা বিমোহিত। দু’জনের চোখের পলক আর পড়ে না। একে অপরের প্রেমে পড়ে। তারপর দিনগুলো রঙিন আর রাতগুলো স্বপ্নিল হয়ে ওঠে দু’জনের। দিন যায়, মাস যায়। তাদের প্রেমের কথা এক কান, দুই কান করতে করতে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে যুবক সওদাগরের বাণিজ্যের বহর গুটিয়ে অন্যবন্দরে পাল তোলার সময় হয়ে যায়। যুবক সওদাগর যাওয়ার কালে রাজকন্যাকে এই প্রতিশ্র“তি দিয়ে যায় যে, অচিরেই ফিরে এসে তাকে বিয়ে করে বিদেশে নিয়ে যাবে। তার স্মৃতির চিহ্ন হিসাবে রাজকন্যাকে একজোড়া কানের ফুল দিয়ে যুবক সওদাগর অন্যবন্দরের উদ্দেশ্যে পাল তোলে।
তারপর কানের ফুল পরে রাজকন্যা ঘুরে বেড়ায়। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। কিন্তু সওদাগর আর ফিরে আসে না। রাজকন্যা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নদীর তীরে অপেক্ষা করে। রাজকন্যার অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। দিনে দিনে বেড়ে ওঠে বিরহব্যথা।
এদিকে রাজার চোখে ঘুম নেই দেখতে দেখতে তার ছোট্ট মেয়েটি বড় হয়ে গেছে। সুপাত্রে কন্যা দান করতে হবে। অবশেষে দেখে-শুনে রাজা তার কন্যার বিবাহ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যময়। এক কান, দুই কান, করতে করতে খবর শেষে রাজকন্যার কানেও আসে।
রাজকন্যা আর কি করে। বিরহব্যথায় কাতর হয়ে, অবশেষে নদীর পাড়েই কাঁদতে বসে। দিনে দিনে দিন চলে যায়। কান্না আর শেষ হয় না। জীবন থাকতে সওদাগর ছাড়া আর কাউকে মালা দিতে পারবে না রাজকন্যা। এদিকে সওদাগরও আসছে না। একদিন পাগলপারা রাজকন্যার কানের ফুল হারিয়ে যায় নদীর বুকে। খুঁজতে খুঁজতে অস্থির হয়ে পড়ে কন্যা। শেষ পর্যন্ত আর খুঁজে পায় না। রাজকন্যার মনে করে সওদাগর আর আসবে না কোন দিন। কানের ফুল হারিয়ে যাওয়া যেন তারই লক্ষণ।
হতাশ, ক্লান্ত রাজকন্যা আরেক কানের ফুল তীরে খুলে রেখে, গায়ের জড়ানো ওড়না খুলে নদীর বুকে আত্মাহুতি দিয়ে প্রেমের মর্যাদা দেয়। সকলেই পরের দিন এসে দেখে রাজকন্যার ওড়না আছে, কানের ফুল আছে কিন্তু রাজকন্যা নেই। কিছুই বুঝতে আর বাকী থাকে না কারো। রাজকন্যা আর নেই। শোকে পাথর হয়ে রাজাও রাজ্য ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকে এই নদীর নাম হয়ে যায় কর্ণফুলী।

Friday, May 29, 2015

গোপনীয়


মাইর খায় মজনু কাঁদে লাইলি , ব্যাপার কি ?
গোপনীয় ।
কাজের মেয়েটা ঘণ্টায় বার বার বারান্দায় , ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
পাশের বাড়ি জোয়ান পোলা আমার গলিতে সারা দিন, ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
একটা সরকারি ফাইলে উপরে লিখা অতি গোপনীয়, ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
ডাক্তারে মনোনীত ল্যাবে সব রোগের পরীক্ষা ! ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
মেয়েটা বার বার বিয়ে ভেঙ্গে দেয় নিজের ইচ্ছায়। ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
ছেলেটা বিয়ে করতে চায় না, পরিবার চিন্তিত । ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
সরকারি চাকরি যা বেতন তার বার গুন খরছ, তবু সুখী। ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ফাইল যায় না । ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার নাই , ক্লিনিকে ডাক্তার পাই। ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
মামলার শুরু আছে শেষ নাই, বিচারের আসায় উকিল ফাসায় । ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
সুযোগ পেলে কিশোরী মেয়ে , শুধু মোবাইল চায় । ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
ভোটের আগে দেয় সালাম , পাশের পরে খুজ নাই । ব্যাপার কি?
গোপনীয় ।
হায় রে কপাল দেশটা গোপনে না জানি কি হারায় !!!!

ধূমপান ত্যাগের গল্প .......................গল্প নয় সত্য



ইমুর খালত বোনের নাম কুমকুম । ইমুর চেয়ে বছর দশেকের বড় ! সেই হিসাবে ইমুর ভগ্নীপতি বা দুলাভাই হয় সামু সিকদার । করিম গঞ্জ উপজেলায় সিকদার বংশের বেশ নাম ডাক । সামু সিকদারের টাকা পায়সা ও মান সম্মান বেশ ভাল । এখন বয়স প্রায় ৪২ বছর । কিন্তু তার সিগারেটের নেশা খুব। বাংলা ফাইভ সিগারেট থেকে তার হাতেখড়ি এখন অবশ্য ব্যান্ড সন্স সিগারেট খায় । অনেক বার সে কিরা কসম খেয়েছে যে আর সিগারেট খাবে না কিন্তু কিছু লাভ হয় নাই, যে লাউ সেই কদু । গ্রীষ্মের ছুটিতে ইমু তার গ্রামের বাড়িতে । ইমুর ছোট মামার মাসায় আজ দুপুরে দাওয়াত । তাই অনেক দিন পর খালাত ভাই বোনদের সাথে দেখা হল ইমুর। এর মধ্য কুমকুম ইমু কে ডাকে বলল- কিরে ইমু তুই নাকি মানুষের মন নিয়া লেখা পড়া করিস , দেখ তোঁ তোর দুলাভাইকে ডাক্তার নিষেধ করেছে সিগারেট খাইতে কিন্তু সে তা ছারতে পারে না। আসলে সিগারেট ছারবে কি না ?
ইমু বলল আপু এভাবে সে সিগারেট ত্যাগ করবে না। মানুষ জানে পাপ করলে শাস্তি পাবে কিন্তু দেখ মানুষ সব চাইতে বেশি পাপ করে । আগে জানতে হবে সে মন থেকে চায় কি না ! এর মধ্য সামু দুলাভাই বলল হ্যাঁ ইমু মন থেকে চাই কিন্তু পারি না।
এখন ইমু বলল দেখুন দুলাভাই সব কাজের পিছনে একটা বাজেট লাগে । একটা প্রফাইল লাগে । এখন দুলা ভাই বলুন আপনি যে সিগারেট ছাড়তে চান তার জন্য বাজেট কত। আপনার বাজেট মত আপনার জন্য প্রফাইল বানান হবে।
দুলাভাই এই সামান্য কাজে আবার বাজেট প্রফাইল ।
ইমু বলল কাজ যদি সামান্য হবে, তাহালে তোঁ আপনি ছাড়তে পারতেন ? যে হে তুঁ আপনি তা ছাড়তে পারেন নাই । তাই কাজটা কি সামান্য বলা ঠিক ?
সবাই একসাথে বলল- না কাজটা সামান্য না ।
দুলাভাই বলল - এখন ইমু তোমার বাজেট বল । দুলাভাই বাজেট তোঁ আপনি বলবেন তবে আপনি এক বছরের সিগারেটের টাকা অ্যাডভান্স দিবেন । দুলা ভাই বলল কত।
ইমু বলল আপনি রোজ কত টাকার সিগারেট খান বলুন ।
দুলাভাই বলল গড়ে ৩০০ টাকা ।
ইমু ওকে ৩০০@৩৬৫=১০৯৫০০ টাকা ওকে । আপনি ৭০% এডভান্স করেন আগামী সাপ্তাহে আপনি সিগারেট ছেরে দিবেন । বিকালেই ইমুর হাতে টাকা চলে আসলো । ইমু প্রফাইল বানিয়ে কাজ শুরু করল । কুমকুম আপুকে বলল ইমু- আগামী সুক্রবার তোমাদের বাড়িতে আমি ও আমার লোক জন আসবো ।
যথা সময় লোক জন নিয়ে ইমু চলে আসলো । কুমকুম আপা তো অবাক ডেকোরেটর চেয়ার বাবুর্চি সকাল ছটায় কাজ শুরু করলো। একদম বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান। এর মধ্য একদল মুন্সি চলে আসলো সবাই বসে আল কোরআন পড়তে লাগলো । সাত টা খাসি জবাই হল । মাইকে কোরআন তেলয়াত চলছে । সামু সিকদার তো অবাক যে ইমু কি শুরু করল । দুপুরের মধ্য সামু সিকদার লক্ষ্য করলো যে তার সব আত্মীয় সজন যেমন চাচারা মামারা ফুফু ফুফা ভাই বোন বোনের জামাই , শ্বশুর বাড়ির লোক জন আসা শুরু করলো । বাড়িতে ইদের আনন্দ । দুপুরের নামজ শেষ ইতি মধ্য করিম গঞ্জ সদরের পেশ ইমান সহ পাশের মসজিদের ইমাম গণ চলে আসছে । এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার ও বয়স্ক মুরুব্বিরা চলে আসছে দাওয়াত খেতে ।
সবাই খাবার টেবিলে বসল ইমন সময় পেশ ইমাম সামু সিকদার কে ডেকে বলল আমি জনাব ইমুর কাছে সব সুনেছি যে আপনি ধূমপান ছাড়তে চান তাই এই আয়োজন । খুব মহৎ কাজ । ইমাম সবার সামনে সামু শিকদার কে এই বলে তওবা করালও যে... আমি তওবা করছি আল্লাহর নামে এই পবিত্র কুরান ছুঁয়ে উপস্থিত আমার স্ত্রী পুত্র কন্যা ভাই বোন মা ও আমার প্রতিবেশী সম্মানী এলাকা বাসি আমি আজ হইতে আর কোন দিন ধূমপান করিব না । যদি ধূমপান করি তাহালে আমি পবিত্র ধর্ম হইতে খারিজ হয়ে এক জন মুনাফেক হিসাবে গণ্য হব । এবং আমি আজ হইতে ধূমপান ত্যাগ করিলাম । হুজুর সবাইকে নিয়ে একটা বিশাল মোনাজাত করিল । খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই হাসি মুখে বিদায় নিল । ইমু তার বাকি ৩০% পেমেন্ট বুঝে নিল .১৯৯১ সনের থেকে এখন পর্যন্ত সামু সিকদার আর ধূমপান করে নাই ।

______বেকার জীবন ও প্রেম.........( ছোট গল্প )




ইন্টারভিউ এর জন্য রেডি হয়েই বসে আছে মিঠু  । প্রতি ইন্টারভিউতেই  দেরি হয় কারন রাত জেগে পড়তে হত । কিন্তু আজ দেরি হয়নি কারন, খুশিতে রাতে  ঘুমাই নি । মিঠু  আজ জানে যে, এই চাকরীটা  হয়ে যাবে । এক বড়-ভাই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে ।  শুধু এটেন্ড করতে হবে আর “কমিশনার” সাহেবের চিঠিটা কোম্পানি ডিজিএম কে দিতে হবে ।  দুপুর বেলা রোদের মধ্যে গিয়ে টিউশনি করাতে হবে না । ছাত্রীর মা পাশে ঘড়ি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করবে না যে, আরো তো পাঁচ মিনিট বাকি আছে এখনই চলে যাবেন ? ছাত্রীর বাবা ছাত্রিকেক পড়ানোর সময় বারবার সন্দেহ নিয়ে উঁকি দেবে না ।
একটা ছাত্রীর বাবার  উপর  অনেক রাগ লুকিয়ে আছে । কোনো একদিন গলির অন্ধকারের মধ্যে পেলে  প্রিয় কয়েকটা গালি দিয়ে ঠাস করে এক চর মারব শালাকে ।
তবে ছাত্রীর মিষ্টি হাসিটা আর দেখতে পাব না । কেউ আর পড়ার বই ছেড়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসবে না । প্রাইভেট মাস্টার মানে সময়ের কিনা একটা গোলাম ।
 মিঠু এইসব ভাবতে ভাবতে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছি । তবে  বাসে যাব না, আজ যাবে রিক্সা । রিক্সা নিয়ে মতিঝিল  গিয়ে নামলো । এখন ও অনেক সময় বাকি দেখে পাশের চায়ের দোকানে বসলো । সাইডেই একটা চশমা পড়া  ছেলে অনেকগুলো কাগজপত্র নিয়ে বসে আছে ।
মিঠু ভাবছে চাকরি টা হলে হয়ত সানু তাকে বিয়ে করবে । প্রাইভেট পড়ানো কোন কাজ না । সানু একটা কথা- মিঠু তুমি বেকার । আর বেকার ছেলের কাছে তাকে তাঁর পরিবার বিয়ে দিবে না।
মিঠুর পাঁশে বসা ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল-
---   ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন ?
----বিরক্তির সাথে জবাব দিল, হ্যা । এখানে আজ কাগজপত্র নিয়ে সবাই ইন্টারভিউ দিতেই আসবে ।
--- তাকে বিরক্ত হতে দেখে মিঠুর মজা লাগল । ইচ্ছে করছিল ঘাড়ে হাত দিয়ে বলি, আরে শালার-ব্যাটা তোরা লোক-দেখানো ইন্টারভিউ দিচ্ছিস চাকরীটা তো আমিই পাবো । তবে কিছু না বলেই চা খেতে লাগলাম, সাথে একটা গোল্ডলিফ নিয়ে জোরে জোরে টান দিতে শুরু করলো ।
কিছুক্ষন পর মৌখিক পরীক্ষা হবে । সবাই রুমের বাইরে লাইন ধরে চেয়ারে বসে আছে । পিয়ন এসে এক এক করে নাম ধরে ডাক দিচ্ছে । মিঠু একটু হাসিও পাচ্ছে কারন, সবই লোক দেখানো । মিঠু  গিয়ে সেই লোকটার পাশেই বসলাম । তাকে বিরক্ত করে দারুন আনন্দ পাচ্ছে মিঠু  । কিন্তু এখন মনে হয় সে বিরক্ত হচ্ছে না । খেয়াল করলো তার হাত-পা কাঁপছে, কপালে ঘাম জমে আছে।
মিঠু  জিজ্ঞেস করলাম,
---- ভাই কোনো সমস্যা ?
-----সে চমকে উঠে বলল, ভাই আমার হাতটা একটু ধরেন ।
----মিঠু তার হাতটা চেপে ধরল । লোকটার প্রতি  তাঁর মায়া লাগল ।
--- লোক টা একটু ভরসা পেল । বলল থ্যাংকস 
--- মিঠু  বলল, এই ইন্টারভিউ দেয়ার দরকার নেই ভাই চলে যান ।
--- সে কাঁপতে কাঁপতে বলল, নারে ভাই এই চাকরীটা আমার পেতেই হবে । নাহলে আমার সুইসাইড ছাড়া
     গতি নেই ।
----মিঠু  পুরাই আশ্চর্য ! সুইসাইড করবেন কেন ?
----ভাই আমার মা নেই । বাবা প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছে । সে নিজের কোনো কাজ করতে পারে না । অথচ আমি তার চিকিৎসা করাতে পারি না । সামান্য টিউশনির টাকা দিয়ে বাজারই হয়না । চিকৎসা কিভাবে করাব ? বোনটা বাবার কাছে থাকে । প্রতি ইইন্টারভিউ দেয়ার পর আমার দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে । কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায়না ।এদিকে ও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । বেতন দিতে পারি না । বলেই লোকটা কেঁদে দিল ।
মিঠু  তার সার্টিফিকেট গুলো হাতে নিয়ে অবাক হলাম । লোকটা এম.বি.এ করে সাধারন জুনিয়র হিসাবরক্ষকের পোস্টে ইন্টারভিউ দেবে । আর আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে কেবল অনার্স পড়েই চাকরী পাচ্ছি । বুকের ভেতরটায় প্রচন্ড ব্যাথা হতে লাগল মিঠু  । তখন নিজেকে নরপিশাচ মনে হচ্ছিল । যেন কারো রক্ত চুষে খাচ্ছি । তাকে সার্টিফিকেট গুলো ফেরত দিয়ে মিঠু  পকেটের কমিশনার চিঠিটা দিয়ে বললাম, ভাই ভেতরে গিয়ে বলবেন আপনাকে মাসুদ সাহেব পাঠিয়েছেন আর এই চিঠিটা দেখাবেন । আজ আপনার চাকরী হয়ে যাবে । বলেই সেখান থেকে বিদায় নিল। মিঠু  ভাবতে লাগলো আমার নিজেরও একটা পরিবার আছে, বাবা ভাল চাকুরি করে । আমার এখনও অনেক কিছু করার সময় আছে, নিজের জন্য নিজের পরিবারের জন্য । আমি সৎ ভাবে আমার চেষ্টা চালিয়ে যাব । আর এবার ফাইনাল পরীক্ষা টা দিয়ে দেব ।
বিকেলে সানুর  এলো মিঠুর কাছে । এসেই বলল-
-- কি তুমি  চাকুরি পাও নাই ।
--- না
-- আসলে তোমার চাকুরি করার ইচ্ছা নাই । আমি তোমাকে তিন মাস সময় দিলাম এর মধ্য চাকুরি
  ও বিয়ে তোমাকে করতে হবে ।
-- দেখ তিন মাস পড়ে আমার অনার্স পরীক্ষা । এ সময় আমি কি করে বিয়ে করি । আচ্ছা সানু চল
  আজ বিয়েটা করি ।
--- না আমি কোন বেকার ছেলে কে বিয়ে করব না । তাছাড়া তুমি ভাল করে জান আমার বড় দুই
   দুলা ভাই ভাল চাকুরি করে । আমি তোমার বাবা মায়ের উপর বুঝা হতে পারবো না ।
--- আমার মা তো তোমাকে বউ করতে চায় ।
--- রাখ তোমার মায়ের কথা । আসলে তোমার মা বাসায় একটা কাজের মেয়ে চায় । না হয় কোন
   মা বেকার ছেলে কে বিয়ে করায় ।
--- দেখ আমি বেকার না প্রাইভেট পড়াই ।
--- পড়াও তো কি জানি । আসলে বড় লোকের মেয়ে খুঁজ গোপনে ।
--- সানু এভাবে কথা বল না।
--- কি ভাবে বলব । আমার ছোট বোন কে তো তুমিই পড়াতে তাই না।
--- হ্যাঁ তাই বলে কি আমি তোমার ছোট বোনকে কি লাভ করি নাকি !
---  যাই হোক । সব শিয়াল একেই ডাক । আমার বোন সিমা কিন্তু এখনো তোমাকে মিস করে
      মিঠু স্যার মানে !!!
--- থাক থাক । আমার কাজ আছে আমি যাই ।
--- যেতে মানা করি নাই । আজ থেকে তিন মাস মনে থাকে যেন ।
সানু চলে গেল । মিঠু কোন সিদান্ত নিতে পারলো না। এমন করে তিন মাস শেষ । সত্যি সানুর বিয়ে ।পাশাপাশি মহল্লা হওয়ায় মিঠু কাছে খবর চলে আসলো । হাত থেকে সিগারেট ফেলে সানুর বাসায় গেল । কিন্তু সানুর বাসার লোক জন বলল সানু দেখা করবে না। মিঠু কে চলে যেতে বলল ।
আজ  সত্যি মিঠুর মন অনেক খারাপ নিজ ঘরে কান্না করছে । কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ।  চাকুরি টা থাকলে হয়ত আজ সানু তাকে বিয়ে করত ।
পরের দিন রাত নয়টা । মিঠু  তাঁর মাকে নিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে একটু চেকাপ করাতে এমন সময় দেখলও ঐ চাকুরি দেয়া ছেলে টা তাঁর বাবা কে নিয়ে এসেছে ডাক্তার দেখাতে । মিঠু কে দেখে ঐ সে জড়িয়ে ধরল । তাঁর বাবা কে বলল যে চাকুরীটা মিঠু ই তাকে দিয়েছে । ভদ্র লোক মিঠু জড়িয়ে ধরে বলল বাবা তুমি আমাদের পরিবার কে বাচিয়েছ । আমি নামাজ পড়ে সারা জীবন তোমার জন্য দোয়া করব । মিঠু র মাকে বলল - আপা আপনি দেখবেন একদিন আপনার ছেলে আপনার মুখ উজ্জল করবে । মা মিঠু কে জড়িয়ে বলল- বাবা দুঃখ না পেলে জীবন কেমন টা বুঝা যায় না। সামনে তোমার সুন্দর জীবন । মিঠু চিন্তা করল যাক আমি একা দুঃখ পেলাম কিন্তু একটা গোটা পরিবার তো সুখি হল ।।

Thursday, May 28, 2015

না বলা ভালবাসা ..................... ছোট গল্প


সিমা সানু তারা দুই বোন । তাদের বাবা আলতাফ খান পেশায় একজন নাম করা উকিল । জেলা শহরে এক নামে তাকে সবাই চিনে । আলতাফ সাহেবের বাবার বাড়িতে মেয়ের আদরে বউ হয়েছিল পারুল । আলতাফ সাহেব তখন খুব ছোট ।পারুল কে নিয়ে আশা হয় মুলত খান বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসাবে ৯ বছর বয়সে। তখন আলতাফ বয়স বার বছরের মত । আলতাফ সাফ কলেজে পড়ার সময় পারুলের সাথে প্রেমে জড়িয়ে যায়। বড় খান সাহেব খুব বুদ্ধিমান মানুষ তাই ছেলে কে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়। আর পারুল কে বিয়ে দিয়ে দেয় ময়মনসিংহ থেকে রংপুর এক তামাক ব্যাবসায়ির সাথে । সেদিন পারুল খুব কেদে ছিল । রংপুর হারাগাছ পারুলের নতুন সংসার জীবন শুরু । পারুল এসে দেখল সে যাকে বিয়ে করেছে তার আরও দুইজন বউ আছে । এখানে সব মেয়ে রা বিড়ি বানানোর কাজ করে । প্রথম প্রথম খুব কষ্ট পেলেও স্বামী তাকে হাসান মিয়া তাকে বুঝায় দেখ আমারা গরিব মানুষ যে তবে খারাপ না। হাতের কাজ শিখ তখন দেখ কাজের মধ্য থাকলে আর কষ্ট মনে থাবে না। পারুল নিজেকে আস্তে আস্তে ঠিক করল আর স্বামীর কথায় কাজ কে কাজের মধ্য সুখ খুজতে লাগলো ।
আলতাফ কিছুতেই পারুল কে ভুলতে পারছিল না। বাড়িতে আসার পর সারা দিন পুকুর ঘাটেই বসে থাকত । ছেলের এমন অবস্তায় আলতাফ খানের মা তারাতারি ছেলে কি অনেক বড় বাড়িতে সুন্দর দেখে একটা মেয়ে সাথে বিয়ে দিল । কিন্তু আলতাফ মনে করে সে পারুলের সাথে কাজটা ঠিক করে নাই । পারুল আলতাফ কে খুব ভাল ভাবে বুঝত । কোন জিনিস চাইবার আগে তার সামনে চলে আসতো । কত রাত পুকুর পারে বসে বসে শুধু তারা দেখে কাটিয়ে ছে । পারুলের একটা গুন আলতাফ কে খুব মুগ্ধ করত টা হল পারুল খুব সুন্দর করে গান গাইতে পারত । যদিও মেয়েটা দেখতে শ্যামলা কিন্তু আল্লাহ্‌ তাকে মন দিয়েছিল ।
১০ বছরের মধ্য আইন পেশায় খান খুব ভাল করেছে । একটা বিশেষ মামলায় সে রংপুর যায় । সকাল ১১ টায় কাচারির কাজ শেষ করে ফেলে । আলতাফ চিন্তা করল রংপুর যখন এসেছি তাহালে পারুল কে একটু দেখে যাই । যে চিন্তা সে কাজ । রংপুর খুব শান্ত একটা শহর । মানুষ গুলো একটু বেশি সরল ও গরিব । হারাগাছ নেমেই ঠিকানা মত গেল পারুলের বাড়িতে। পারুল ঘরে ডুকে খুব অবাক হল। যেমন টা ভেবে ছিল ঠিক তেমনেই । একটা ছোট ঘর । পারুল আলতাফ কে দেখে অবেক । একটা হাত পাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগলো । গত বার বছরে অনেক পরিবর্তন পারুলের । আলতাফ কে বলল-
-- কেমন আছেন । আর কি মনে করে এত বছর পর ।
-- পারুল একটা কাজে আসা তাই ভাবলাম তোমাকে দেখে যাই ।
-- খুব ভাল করেছেন । আমি অনেক ভাগ্যবতী এই যে আপনি আমাকে সরণ রেখেছেন
-- তা পারুল তোমার ছেলে মেয়ে ।
-- পারুল বলল একটা মাত্র ছেলে স্কুলে পারে । আমি তো বিড়ির কাজ করি ।
--- আপনার কথা বলেন ।
-- থাক পারুল আমার কথা । তুমি আমাকে মাপ করে দিও । জীবনে আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি
। থাক সে কথা আপনি বসেন আরাম করে । পারুল নিজের হাতে আবার পায়ের মুজা গুলো গুল দিল।
সারা দিন থেকে বিকাল বেলায় বিদায় নিল আলতাফ । বিদায়ের সময় পারুলের হাতে দশহাজার টাকা দিয়ে বলল ঘরটা মেরামত করিস । ছেলে কে লিখা পড়া করাইস । তোর ছেলের নামটা তো জানা হল না।
--- ছেলের নাম মঞ্জু ।
--- আলতাফ অবাক হল । পুকুর পারে বসে বলেছিল তাদের সন্তান হলে নাম রাখবে মঞ্জু ।
সেটা ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক । বিদায় নিয়ে চলে আসে আলতাফ । মমতার চোখের জল
নিরবে ঝরে পারুলের চোখে । অবাক মানুষের জীবন ভালবাসা আর মমতা সত্যি মানুষকে এভাবে
কাদাতে পারে তা কিন্তু আলতাফ আগে ভাবতে পারে নাই । সময় গড়িয়ে গেল অনেক দিন এর মধ্য
সানু বসে পেপার পড়ছে বারান্দায়।আজ কলেজ নেই । ময়মনসিংহ মহিলা কলেজে সে পরে । এমন সময়
সিমা এসে বলল --
-- আপু মা ডাকছে আব্বুর নাকি অনেক তোমার উপর অনেক বিরক্ত
-- আমার উপর বিরক্ত তাতে তো কি আব্বু কে বলল আমার টাকা লাগবে। আমি কলেজের পিক নিকে
যাব
--- মা বলেছে তোমাকে যেতে দিবে না ।
--- মায়ের কথায় হবে না । যা বলার আব্বুকে বলতে বলতে বল । আলতাফ সাহেব তার বড় মেয়ে কে একটু বেশি আদর করে । কারন বড় মেয়ে একটু বেশি অভিমানি । আলতাফ সাহেব ডাকল
-- কই মা সানু একটু শুনে যা
-- হা আব্বু বলল , তুমি তো আমার উপর বিরক্ত তাই না ।
-- হ্যাঁ আমি বিরক্ত তবে তোমার উপর একা না । তোমার মা ও মেয়ের উপর ।
-- তা তো হবেই !তুমি তো আম্মুর কোন দোষ দেখ না । আমার সব কাজ আম্মু ভুল ধরে
-- তুমি তো ভুল কর ।
-- হ্যাঁ আমি ভুল করি আর সিমা ভুল করে না ।
-- আছা তুমি পিক নিকে যাবে কিন্তু মাকে নিলে সমস্যা কী
-- আম্মু সাথে গেলে কারো সাথে কথা বলতে দেয় না।
--- অহ তাই বল ।
-- ঠিক আছে দুই বোন যাও । তবে সাবধান ।
এই হল আলতাফ সাহেবের সংসার । কোট থেকে ফিরে চেম্বারে বসে কাজ করছিল এমন সময় একজন ছেলে আসলো হাতে একটা চিঠি । আলতাফ সাহেবের চিনতে অসুবিধা হল না । পারুলের ছেলে তবে এখানে কেন । চিঠি না পরে বলল
-- বাবা বস , কেমন আছ ,
-- জি মামা ভাল
-- কই সানুর আম্মু ও কয়দিন এখানে থাকবে ।
-- কে এই ছেলে ।
-- তুমি চিনবে না । আমার দূর সম্পর্কের বোনের ছেলের ছেলে । যাও বাবা গেস্ট রুমে যাও । আলতাফ সাহেব চিঠিটা পরে অবাক হল । কই শুনছ এই ছেলে কিন্তু জুয়েল ।
-- জুয়েল বল আর হীরা বল আমার মেয়েরা বড় হয়েছে । এত বড় ছেলে বাসায় রাখা যাবে না । তারাতারি অন্য কোথাও রাখো । আকলতাফ সাহেব একটু হাসল । আর মনে মনে বলল এই মহিলা কোন দিন মানবতা কই বুঝবে না ।
রুমটা গুছিয়ে নিল । এমন সময় দুপুরে খাবার নিয়ে ঘরে এলো কাজের মেয়ে মিনা । বলল - আপনি আমাদের ঘরে যাবেন না । যা কিছু লাগবে চেম্বারের সোহেল আছে তাকে বলবেন ।। আমি আপনার ঘরে খাবার দিয়ে যাব । আর ভাই জান আপনার মামার বউ মানে আপনার মামী খুব রাগি মহিলা ।
--- আমি তো এখানে অল্প কিছু দিন থাকব । আসা করি কোন সমস্যা হবে না ।
--- তোমার নাম কি
-- আমার নাম মিনা এই বাসায় কাজ করি ।
-- ও মিনা বোন তোমার বাড়ি কোথায় ।
--- আপনি চিনবেন না । আমাদের বাড়ি নান্দাইল । ভুইয়া পাড়া । আমার বাবা আমার মায়ের রে
খুন করছে । তাই জেলে এই স্যারের বাসায় আমি কাজ করি । ঐ আমার বাবার মামলা চালায়
--- কেন তোমার মাকে তোমার বাবা খুন করল
--- কেন আবার । আমার মা একটা ম্যাসে রান্না করত । পরে ম্যাসের এক বেডার সাথে নাকি প্রেম করেছিল । মা পলাইয়া তার লগে সিনামা দেখতে গেছিল । বাবা টের পাইয়া । মারে গলায় গামছা দিয়া মাইরা ফেলছে । আর ঐ বেডার ও হাত পা ভাইঙ্গা দিছে । ঐ বেডা এখন পঙ্গ ।
--- তোমরা কয় ভাই বোন মিনা ।
--- আমি একা ,
-- অহ মিনা তুমি অনেক ভাল একটা মেয়ে । আমাকে মঞ্জু ভাই বলে ডেক ।
মিনার মনটা আনন্দে ভরে গেল । মঞ্জু অবাক হল কারন সে নিজেও একজন গরিবের সন্তান ।
রাতে খাবারের টেবিলে বলল কি সানুর মা ছেলে টা কোথায় ।
-- ওকে ওর রুমে খাবার দিয়েছি ।
-- কেন আমাদের সাথে বসে খেত ।
--- কে আব্বু সানু ও সিমা বলল
-- তোমরা চিনবে না মা । আমার এক গরিব বোনের ছেলে ।
-- সানুর মা বলল - গরিব তাহালে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে দাও ।
--- আহ থাম তো । যা না জান তাই নিয়ে কথা বলতে ছো । আর তুম জানবে কি করে তোমার বংশে তো কেউ মেট্রিক পাশ করে নাই ।
--- ঠিক বলেছ বাবা । মা মনে করে টাকা আর বংশ সব । এটা কি ঠিক বাবা । আর কে এসেছে কি পরিচয় বল বাবা সিমার কথা
-- মা মনি ছেলেটা নাম মঞ্জু । এখানে মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষা দিয়েছে
-- ওমা বল কি
-- হ্যাঁ বুয়েটেও দিয়েছে । সানু বলল খুব মজা হবে । আমি কালকে ভাই কে নিয়ে কলেজে যাব । আপু পিক নিকে ও নিতে পার । সবাই ভাবে আমাদের ভাই নাই । সবাই কে অবাক করে দেব যে আমাদের একটা ভাই আছে সে অনেক গুড ছাত্র ।
--- আলতাফ সাহেব মেয়েদের কথা শুনে খুব খুশি । ভাগ্য মেয়েরা তার মত মনের হয়েছে ।
সাকালে মিনা দুই বোন কে নিয়ে গেল গেস্ট রুমে । সানু অবাক হয়ে দেখছে মঞ্জুর চোখের দিকে । কি মায়া লাগা চোখ । সিমা নিজেই বলল - ভাইয়া আমি সিমা ক্লাস টেন । আমার বড় আপু সানু কলেজে পরে ইন্টার প্রথম বর্ষ । আবার মিনা বলল ভাই জান সারের মেয়ে । আপনার মামাত বোন ।
সানু বলল--এই মিনা বিছার চাদরটা বদলাও । আর নাস্তা ঘরের টেবিলে দাও ।
মঞ্জু বলল--
-- না থাক আমি এখানে ভাল আছি
-- বেশি কথা বলা যাবে না । ওকে মিঃ টার । কি বলিস সিমা
-- হ্যাঁ তুমি ঠিক আপু আমাদের ভাই আমাদের সাথে খাবে ।
খুব অল্প সময়ের মধ্য সানু সিমার সাথে তাঁর অজানা মায়ার বন্ধুত হয়ে যায় । বিকেল হলেই চলে যায় কৃষি বিশ্ব বিদ্যাল্যের ক্যাম্পসে । সানু খুব সুন্দর করে বলল - মঞ্জু ভাই তুমি কোথায় পরবে । ধর মেডিক্যাল টিকলে আবার বুয়েট এ । কোন টা বেঁচে নেবে ।
-- সানু তুমিই বল আমি কোনটা নিলে ভাল হয় ,
-- বুয়েট অ্যান্ড সিভিল
-- আমার ও ইচ্ছা
-- ডাক্তারি পড়ার মত টাকা নেই ।
-- মঞ্জু ভাই তোমার টাকার চিন্তা করতে হবে না । আব্বু আছে না।
সানু সিমা আর মঞ্জু তাদের সময় খুব ভালই যাচ্ছে । বিকেলে মঞ্জু বারান্দায় বসে পেপার পরছিল । এমন সময় সানু এসে বলল
-- মঞ্জু ভাই একটা চিঠি লিখে দিতে হবে আমার বান্ধবি কে দেব । এমন ভাবে লিখে দিতে হবে যে
কোন যেন, কোন ছেলে কোন মেয়ে কে দিয়েছে ।
-- মঞ্জু একটু হেসে -আচ্ছা কাল সকালে নিও
-- মঞ্জু ভাই আমি চাই তুমি নাম করা ইঙ্গিনিয়ার হও । আমি আব্বুকে বলেছি । সে তোমার সব
ধরনের সহযোগিতা করবে ।
সিমা দু জনের দিকে তাকিয়ে বলে- সানু আপু আমি কিন্তু মঞ্জু ভাইকে তোমার চেয়ে বেশি পছন্দ করি
-- ঠিক আছে তুই যদি বেশি পছন্দ করিস তাহালে মঞ্জু ভাই তোর ।
-- না আপু আমি এত স্বার্থ পর না । মঞ্জু ভাই কে তোমাকে দিয়ে দিলাম ।
--- মঞ্জু বলে তোমরা দুই বোন আমার কাছে অনেক প্রিয় । সিমা তুমি ভাল করে পড়। সামনে তোমার এস এস সি কিন্তু !
-- আর আপুর লেখা পড়া করবেনা বুঝি ।
সানু মনের অজান্তেই মঞ্জু কে ভাল লাগতে থাকে । সে স্বপ্ন দেখে মঞ্জুর মধ্য নিজেকে । সিমা কে বলে শুন সিমা আমাদের বড় ভাই নাই । মঞ্জু অনেক ট্যালেন্ট ছাত্র । বাবার খুব পছন্দ । আমাদের সাথে থেকে যাবে মঞ্জু ভাই । কি বলিস ?
-- খারাপ হয় না। তুমি কি আবার ভাইয়ার প্রেমে পড়লে নাকি ? যা প্রেমে পড়লে কি তকে বলতাম না
।খুব সকাল মঞ্জু চিঠিটা লিখা শেষ করে কয়েক বার পড়লো । মঞ্জু কিন্তু সানু কে কল্পনা করেই চিঠিটা লিখেছে । কাজের মেয়ে মিনা কে ডেকে মঞ্জু তাঁর হাতে চিঠিটা দিয়ে বলল- এটা সানু কে দিবে । মিনা চিঠি নিয়ে সানু কাছে যাওয়ার সময় সানুর মা বলল - কি রে মিনা হাতে কি দেখি বলে চিঠিটা পেয়ে সানুর মায়ের মাথায় রক্ত উঠে গেল । তখন সানু ও সিমা ঘুমাচ্ছিল । চিঠিটা পড়ে সুজা মঞ্জুর রুমে গিয়ে , মঞ্জুর গালে ঠাস ঠাস করে চর বসিয়ে দিল । আর বলতে লাগলো ছোট লোকের বাচ্চা । এখন জামা কাপড় নিয়ে এ বাড়ি থেকে বের হ । মঞ্জু আর কোন কথা বলে না । বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে আসে রেল স্টেশনে । ট্রেন পেয়ে যায় ঢাকার ।
কাজের মেয়ে মিনা দূর থেকে সব দেখে কিন্তু কিছু বলার থাকে না। সানু ঘুম থেকে উঠে নাস্তার টেবিলে । সবাই বসছে এমন সময় সিমা বলে মঞ্জু ভাই কোথায় ।
--- সানুর মা বলে ও চলে গেছে ।
--- সানু চলে গেছে মানে
--- সানুর বাবা কি বলছ । আগামী কাল ও মেডিক্যালে ভর্তি হবে । আমি সব ঠিক করে এসেছি ।
--- সানুর মা সানুর বাবা কে সেই চিঠিটা দেখায় । সানু বলে দেখি । সানু পড়ে বলে খুব সুন্দর করে তো লেখেছে ।
--- সানুর মা বলে কত সাহস সে তোমাকে এই চিঠি লিখে ।
--- মা এই হোল তোমাকে নিয়ে একটা সমস্যা । কোন কিছু না জেনে আগেই মাইন্ড কর । আব্বু আমার বান্ধুবির জন্য এই লিখতে বলেছি । যে ওকে নিয়ে মজা করব । মঞ্জু ভাই তো সিমা আর আমার কথা শুনে এই টা লিখেছে । সানুর মা চুপ হয়ে গেল । নিজের বুকামি বুঝতে পারলো । কিন্তু মঞ্জু কে আর পাওয়া গেল না । মঞ্জু বাড়িতে ও যায় নাই । সানু সারা দিন সারা রাত কান্না করলো ।
মনের অজান্তে সে মঞ্জু কে ভাল বেসেছে । মঞ্জুর মত এত সরল মনের মানুষ কে তাঁর মা মেরেছে ।
সানু আর সিমা দুই বোন বাবা গলা ধরে কান্না করে বলে । বাবা ও কি আর কোন দিন ফিরে আসবে না.............................................

Friday, May 22, 2015

এক জন মনোবিজ্ঞানী ও পরকীয়া প্রেমিক


---------------------------------------------------
রেলগাড়িতে একজন মনোবিজ্ঞানীর সামনে বসে ছিল এক যুবক। যুবকের মুখে খুব দুশ্চিন্তার ভাব ফুটে আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে দু’জনের পরিচয় হল। এক পর্যায়ে যুবকটি মনোবিজ্ঞানীকে বলল
--- সাত বছর আগে আমি বিয়ে করেছি। আমার একটি ৫ বছরের মেয়ে আছে। আমার স্ত্রী আর আমি একই ক্লাশে পড়াশোনা করতাম। সে ভালো মানুষ। কর্মক্ষেত্রে আমিও যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু এক বছর আগে একটি সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় এবং আমি তাকে ভালবাসি। আমি এখন যে সমস্যায় আছি -এমন পরিস্থিতিতে মিঃ মনোবিজ্ঞানীর আপনি কি করতেন । যদি সমস্যা টা আপনার হতো ।
---- মনোবিজ্ঞানীর বলল তোমার পরিবর্তী পরিকল্পনা কি আমাকে বল
------আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাই। কিন্তু এখনো এ- ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তাই ভয়ানক দুশ্চিন্তায় আছি।
--- ‘দুটোর মধ্যে একটি বাছাই করা সত্যিই সহজ কাজ নয়। এ- নিয়ে তোমার মনে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে তা খুবই স্বাভাবিক। মনোবিজ্ঞানী কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন
--তোমাকে কি একটা গল্প বলতে পারি । যদি তুমি মনোযোগ দিয়ে শুন ।
-- হ্যাঁ বলুন যদি এতে আমার উপকার হয় ।
---হ্যা হবে । তবে একটা সিদান্ত নিতে পারবে ।
-- সিদান্ত নেয়ার মত হলে বলুন
--- তাহালে শুন । তুমি তোমার বসের হয়ে একটি বড় কাজ করলে। এখন তিনি তোমাকে পুরষ্কৃত করতে চান। তিনি তোমাকে দুটো পুরষ্কারের একটি বেছে নিতে বললেন। পুরষ্কার দুটি হচ্ছে: তোমাকে নগদ দুই লাখ টাকা দেয়া হবে অথবা তিন বছর পর তোমাকে চার লাখ টাকা দেয়া হবে। তখন তুমি কোনটি নেবে?’
--- অবশ্যই আমি নগদ পুরষ্কারই নেবো’, যুবক কোনোকিছু না ভেবেই উত্তর দিল।
--- কেন? নগদ নিবে
--- ‘কারণ, ভবিষ্যত অনিশ্চিত। কে জানে কয়েক বছর পর কী ঘটবে? তিন বছর পর আমার বস না-ও থাকতে পারেন। অথবা তিন বছর পর টাকার মূল্যমানও হ্রাস পেতে পারে।’
--- মনোবিজ্ঞানী হেসে বললেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ। ভবিষ্যতের টাকার চাইতে বতর্মান টাকার মূল্য অনেক বেশী। ঠিক তেমনি, ভবিষ্যতের সুখের চাইতে বতর্মান সুখের মূল্য বেশী। কেননা, ভবিষ্যত সবসময় অনিশ্চিত। কে জানে ভবিষ্যতে হয়তো সেই সুন্দরী মেয়ে আর তোমাকে ভালোবাসবে না; তোমাদের দু’জনের সুসম্পর্ক তখন না-ও থাকতে পারে। তোমার বর্তমান স্ত্রী সম্পর্কে তুমি জানো; সে তোমাকে ভালোবাসে এবং সে ভালো মানুষ। তাই তোমার উচিত বর্তমানের ওপর ভরসা করে থাকা , বর্তমান সুখকে আঁকড়ে ধরা; ভবিষ্যতের সুখের আশায় বর্তমান সুখকে ত্যাগ না করা।’
মনোবিজ্ঞানী কথা শুনে যুবকের মনের সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব একমুহূর্তে দূর হয়ে গেল। সে বলল, ‘আমি পরের ষ্টেশনে নামবো। আমি আমার মেয়েবন্ধুর কাছে যাবো না,
যাবো আমার স্ত্রীর কাছে। গোটা বিষয়টি এখন আমার কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমাকে ভালো পরামর্শ দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।"

Monday, May 18, 2015

খুনি প্রেমিক..............................।


সেলিনা জাহান প্রিয়া ।।
মোতালেবের মেয়ের নাম পরী । ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার পরে বাপে আর স্কুলে যাইতে দেয় নাই । গঞ্জের হাটে মোতালেবের ধান চালের বেশ বড় মোকাম । এক মেয়ের পর দুই ছেলের জন্ম । তাই মেয়ে কে খুব আদর করে মোতালেব । টাকা জমি সবেই আছে তার তবে একটা বিষয় খুব মজার তার দ্বিতীয় বিয়েটা ছিল খুব রহস্য। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর মোতালেবের যত উন্নতি । একেই গ্রামের এক বিধবা মেয়ে কে বিয়ে করে।ঐ মহিলার অনেক টাকা ছিল তার কারনে বিয়ের পর থেকে কিছু লোক তার পিছনে লেগেছে ।
লাগার কারন টা মোতালেবের দ্বিতীয় বউ রাহেলা । রাহেলা খুব সু কোশলে তার প্রথম স্বামীর সব টাকা পয়সা জমি তার নিজ নামে করিয়ে নেয় ।প্রথম স্বামীর ঘরের ছেলে কে রাহেলা কিছু দেয় নাই । তারা তাদের বাপের ভিটায় থাকে চাচাদের সাথে । রাহেলার ছেলে স্বপণ ও মেয়ে স্বর্ণা তার মায়ের সাথে কথা বলে না। তবে চাচা ও চাচিরা তাদের বাবা মায়ের কষ্ট অনুভব করতে দেয় না।
মোতালেব মিয়া এখন যেমন পয়সাওয়ালা তেমন একটা সু চতুর ব্যক্তি । কেউ তার সাথে কোন কিছু নিয়া বারাবারি করে না। গ্রামের রাজনীতি সে বুঝে তাই সেই সব লোকের সাথে জোট বেধে চলে ।
মোতালেবের বাড়ির সামনে একটা পুকুর পাকা ঘাট , আশপাশের সবাই পাকা ঘাট বলে গাঁ গোসল করতে এই পুকুরে আশে । পরী কলস নিয়ে পুকুর ঘাঁটে পানি ভরছিল ঠিক এমন সময় রঞ্জন বলল
--জল কন্যার কেশ বরন চুল কিন্তু চোখে জল কেন!!
-- মুখে পানি দিলে চোখে জল থাকবে!
-- না আমি ভাব লাম বাবার আদরের মেয়ে তাই বাবার জন্য কাঁদছ।
-- বাবার জন্য কাদলে কি এমন সময় পুকুর ঘাঁটে কেউ জল নিতে আসে ।
-- আহা রে পরী বানু কি তাহালে আমার জন্য ঘাঁটে
-- না তোমার জন্য না । তোমার দাদার জন্য ।
-- ইস আমার দাদির চেহারা দেখছ ।
-- দেখছি । মরার আগে তোমার দাদারে শান্তি দেয় নাই ।
-- ভাল । এই জন্যই আমি তোমাকে পছন্দ করছি ।
-- থাক তোমার পছন্দ নিয়া। বিড়ালের কপালে ইলিশ মাছের কাঁটাও ঝুটে না।
-- অহ তাই ঠিক আছে দেখা যাবে ।
-- শুন রঞ্জন আমার দিকে তাকাইয়া লাভ নাই । তুমি আগামী বছর দিবা মেট্রিক । তার পর এই এ । তার পর সে বিয়ে । আর আমি তোমাকে পছন্দ করে লাভ নাই । আমার বাবা বলেছে এক মায়ের ছেলের কাছে বিয়া দিবে । আমার নাতি নাত্নি হোক তাদের লাইন ধর ।
রঞ্জন অবাক হয়ে পরীর কথা শুনে । আসলে রঞ্জন আর পরী ক্লাসমেট তাই রঞ্জন একটু দুষ্টামি করে অন্য কিছু না। রঞ্জন জঙ্গল বাড়ি হাই স্কুলের খুব ভাল ছাত্র । খুব ভাল বল খেলে । বাবার অবস্তা মোটা মুটি ভাল । তবে নানা বাড়ির অবস্তা খুব ভাল । রঞ্জনের বাবা খুব রাগি মানুষ কিন্তু খুব সত্য বাদি ছয় নয় বুঝে না ।
পরী আর রঞ্জন স্কুল জীবন থেকে এক জন আরেক জনের সাথে দেখা হলে ঝগড়া হবেই । অনেক বার এই জন্য রঞ্জন কে শাসন করেছে মোতালেব মিয়া । এখন পরী বড় হওয়াতে আর বিচার সালিশ নাই । ঝগড়াটা একটা নীবির বন্ধুতে পরিণীত হয়েছে । এ দিকে রঞ্জন আর স্বপনের এক চাচাত ভাই সাজুর সাথে খুব মিল । সাজু আর্মিতে চাকুরি নিয়েছে এ দু বছর । বাড়িতে আসলে আড্ডা হয় রঞ্জনের সাথে । রঞ্জন রা আবার সাত ভাই । এদের মধ্য রঞ্জন ছয় নাম্বার ভাই । অন্য ভাইদের দাপটে রঞ্জন খুব দাপটে চলে ।
রবি বার স্কুল বন্ধ রঞ্জন প্রাইভেট পরতে যায় শঙ্কর বাবুর কাছে । শঙ্কর বাবুর মেয়ে লক্ষ্মী হল পরীর বান্ধবি । মাঝে মাঝে পরী আসে ।
রঞ্জন এসে দেখে স্যার নাই তাই অপেক্ষা করছে এমন সময় লক্ষ্মী বলল-
-- রঞ্জন ভাই পিসির ঘরে যান তারাতারি ।একটা সাপ পিসির ঘরে ।রঞ্জন একটা লাঠি নিয়ে পিসির ঘরে যায় ।
-- কি মারবে নাকি আমাকে
-- ওতুমি!!!ও যে বললা সাপ ।
-- মেয়ে মানুষ আর সাপের মধ্য তেমন কোন পার্থক্য নাই । মেয়ে মানুষ শুধু কানে শুনে । কিন্তু সময়
মত ঠিকেই ছুপ মারে ।
-- ইস কি যে সাপ । তা কোথায় কামড় দিবে ।
-- তোমার কলিজায় ।
-- আমার কলিজা তো নাই ।
-- কেন নাই । শুনি ।
-- কলিজা থাকলে তো তোমারে তুইলা আনতাম ।
-- তুইলা আনতে হবে না। আমার পা আছে । ডাক দিলে হাইটা আসতে পারব ।
-- তুমি আসতে চাইলে কিন্তু আমি কুলে করে আনব ।
-- কুলে করে আনতে হবে না । পারলে একটা সাইকেল নিয়া আইস । চাঁদনী রাতে কাচা রাস্তায় সাইকেল চড়তে অনেক মজা ।
-- সত্যি আইবা তো । মরিস খালি বাজারে যাত্রা আইসে যাইবা ।
-- দাদির ঘরে কিন্তু দাদি তো রাইতে আবার ঘুম থেকে ডাকে পানি চায় , বাথ রুমে যায় ।
-- শুন দাদিরে ৪ টা হিসটাসিন বড়ি বিকালে খাবার স্যালাইনের সাথে খাওয়ে দিও ।
-- সাহস আছে তো । আমি কিন্তু সত্যি আসবো । লক্ষ্মী বলে - কিরে আমারে নিবি । পরী বলে- নারে
লক্ষ্মী এক সাইকেলে দুই সাওয়ারি ভাল না।
-- পরী যাই করিস দেখিস তোর বাপে না আবার রঞ্জন কে ধুলাই দেয় ।
-- লক্ষ্মী দিদি চিন্তা কর না । ওর বাপরে আমি কিন্তু ডরাই না।পরী আমি রাতে পুকুরে একটা ঢিল পারলে তুমি জানালা দিয়া আইস ।
-- কয়টায় আসবা
-- রাত ১১ টায়
পরী কিন্তু দাদিরে ঠিকেই ট্যাবলেট খাইয়ে দিয়েছে সন্ধ্যা ৭ টায় । দাদি রাত নয়টায় বলে -
-- পরী আমার মাথা জিম জিম করে কেন । দাদি মনে হয় প্রেসার লো চিন্তা কর না ।
-- আচ্ছা আমি ঘুমাইলে কিন্তু তাজ্জতের নামাজের সময় ডেকে দিস ।
পরী কিন্তু এমন সাহস কখনো এর আগে করে নাই । এই সাহস টা পেয়েছে তার দ্বিতীয় মায়ের কাছ থেকে । ঐ মা গল্পের ছলে বলেছে আগে নাকি তার বাবা ওনাকে নিয়ে এভাবে করিম গঞ্জ যেত যাত্রা দেখতে ।
পরী মনি খুব অস্তির । একটা কান পুকুরে জলের দিকে । চেয়ে আছে ঘড়ির দিকে । রাত এগার টা । শব্দ পেল পরী মনি । শীতের চাদরটা ভাল করে শরীর মুরিয়ে ঢেকে নিল । সাইকেলে সামনে বসল ।
বেশি কুয়াসা নেই । রঞ্জন খুব সুন্দর করে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । রঞ্জন বলল -
-- তুমি আসবা এই বিশ্বাস আমার ছিল ।
-- আমি অবিশ্বাসের কি করেছি শুনি ।
-- কিছু কর নাই আর বাকিও রাখ নাই । তোমার বাবা আমাকে যে কতবার বাবার হাতে মার
খাইয়েছে সে খেয়াল আছে ।
-- সে খেয়াল আছে বলেই তো আসলাম । যেন মাইরাটা ভাল করে খাও ।
-- দেখ কে জানি মুখে লাইট মারছে ।
-- ও রঞ্জন তুমি ভয় পাইয় না। আমরা এখন অন্য ইউনিয়ন এ । এখানে আমাকে কেউ চিনবে না।
-- রাস্তায় যদি ডাকাত ধরে পরী ।
-- চিন্তা কর না কমরে ওড়না দিয়ে একটা দাও সাথে আনছি ।
-- রঞ্জন তো অবাক সত্যি একটা দাও নিয়ে আসছে পরী মনি । তোমার তো অনেক বুদ্ধি ।
-- এটা কিন্তু আমি সৎ মায়ের কাছ থেকে সিখছি । অনেক কথায় কেটে যায় সময় । চাঁদের আলতে রঞ্জন আর পরী ঠিক যাত্রা দেখে চলে আসে । পরিকে রঞ্জন আর বলতে হয় না আমি তোমাকে ভাল বাসি বা পরীকেও বলতে হয় নাই । তারা কেউ কাউকে কোন দিন চিঠি লিখে নাই। শীত শেষ গরম পরেছে । মোতালব মিয়া একটু একটু খবর পায় যে পরী ও রঞ্জন কে মাঝে নাকি রাস্তায় বা মাঠের মধ্য একটা শিমুল গাছ তলে দেখা যায় । কিন্তু কেউ কোন প্রমান দিতে পারে নাই ।মোতালব মিয়া ও চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে । কিন্তু মোতালব মিয়াঁর চোখ গেল মেয়ের পায়ে , দেখল এক পায়ে চেইনের মত নুপুর পারা । আর সেই রকম একটা চেইন হাতে পরা রঞ্জনের । বুঝতে আর বাকি রইল না ।
ভোর বেলা মোতালব মিয়া চিল্লাতে লাগলো ডাকাত ডাকাত । ঘরের দরজা ভাঙ্গা মোতালবের হাত বাঁধা। মোতালবের বউ রাহেলা চিলাচ্ছে । সকালে পুলিশ আসলে মামলা হয় । তিন জন আসামি রঞ্জন সাজু ও কাঞ্চন । কাঞ্চনের বাবার সাথে মোতালব জমি নিয়ে বিরুধ । সাজু ছুটিতে বাড়িতে । গত কাল তিন জন কে একসাথে মোতালব দেখেছে বাজারে । আর যাই কই এক সাথে তিন পাখি । আসলে থানার এক পুলিশের বুদ্ধিতে মোতালব মিয়া এই নাটক করে করে তিন জন কে জেলে পাঠাল ।
রঞ্জন আর মেট্রিক দিতে পারলো না । ছয় মাস পরে জাবিনে বের হল দুই জন। মামলা চলছে । বাড়িতে আসতেই রঞ্জনের মা ছেলে কে ধরে কান্না । মাকে বলল আমি একটু আসি বলে সুজা চলে গেল শঙ্কর স্যারের বাড়িতে । লক্ষ্মী রঞ্জন কে দেখে কাঁদতে লাগলো । বলল
--রঞ্জন ভাই তুমি কি সব খবর জান । রঞ্জন বলল - আমি তো খবর নিতে আসছি ।
লক্ষ্মী বল না, কি খবর । আমি জানতে চাই পরী কেমন আছে । ওর সাথে আমার দেখা করার দরকার
--- লক্ষ্মী কাঁদতে কাঁদতে বলল - কি ভাবে দেখা করবা । তোমাকে জেলে দিয়ে মোতালব চাচা তার
পরের মাসে পরী কে জোর করে করিম গঞ্জ উরদিঘি গ্রামে বড়বাড়িতে বিয়ে দেয় । ও কিছুতেই রাজি ছিল না। পরী বাবা তোমার মামলা তুলে নিবে এই সর্ত মতে বিয়ে করে । পরে জানতে পারে যে ওর বাবা তোমার মামলা শেষ করে নাই । পরে গত মাসে পরী ফাসি দিয়ে মারা যায় । এখন আবার মোতালব মিয়া ঐ পরিবারের লোক নামে হত্যা ও যোতুকের মামলা করেছে ।
রঞ্জনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে আসলো । মাকে জড়িয়ে ধরে আরও জোরে কাঁদতে লাগলো ।
রঞ্জন এখন নীরব একটা মানুষ হয়ে গেল । সাজু আবার চাকুরিতে যোগ দিল । কাঞ্চনের জেল থেকে বের হতে লাগল এক বছর । ঠিক তার দুই বছর পরের ঘটনা। । রঞ্জন গাজি পুর একটা গার্মেন্টস এ কাজ করে ।রমজান মাস । ঐ গার্মেন্টস একজন ভারতীয় বসের সাথে সে থাকে তাই বসের সাথে দু বার পাসপোর্ট ছারা ভারত গেছে । এবার বস পাসপোর্ট করে ভিসা লাগিয়ে দিয়েছে । রঞ্জন কিছু কাপড়ের ডিজাইন আইন তে ভারত যায়। যাওয়ার পর জানতে পারল তাকে আরও পনের দিন থাকতে হবে। রঞ্জনের মাথায় একটা কিরমিনাল বুদ্ধি চলে আসলো । পাসপোর্ট ছারা সে চলে আসলো বাংলাদেশে । সে জানে মোতালেব মিয়া রোজার দিন ফরজ নামাজ পরে মসজিদে । সন্ধ্যায় সে কিশোর গঞ্জ কাচারি বাজার থেকে একটা দা ও চাপাটি কিনে । এক বছরের মধ্য কিন্তু রঞ্জন আর গ্রামে আসে নাই । পাসপোর্ট করার পর থেকে সে লম্বা দাড়ি রেখছে । দা ও চাপাটি টা খুব ভাল করে দার দিয়ে নেয় । তার পর পুরান থানা এলাকা থেকে একটা সাইকেল কিনে ।একটা ছালার ব্যাগে দা ও চাপাটি ভরে রেল স্টেশনে যেয়ে বসে থাকে আর চা খেতে থাকে । রাত তিনটা বাজে। রেল স্টেশন থেকে সাইকেলে করে রওনা দেয় রঞ্জন
তার গ্রামের বাড়ির দিকে । শিমুল গাছ তলে সাইকেল টা রাখে । আর রাস্তার দিকে খেয়াল করে । দেখে টচ লাইট জালিয়ে মোতালেব মিয়া মসজিদের দিকে আসতেছে ।আর যাই কই পিছিন থেকে রঞ্জন বলল
-- বাবাজি আসসালামুলাইকুম
-- পিছনে তাকিয়ে মোতালেব অলাইকুম সালাম কে
-- আমি রঞ্জন কেমন আছেন
-- মোতালেব কোন কথা না বলে চুপ করে হাঁটতে লাগলো
-- মোতালেব তুই চুপ কইরা দারা কিন্ত
-- মোতালেব নিজের বুকে হাত দিয়ে দেখল যে তার বুক কাপতাছে । বাবা রঞ্জন তোমার হাতে কি
-- এক হাতে দা আর এক হাতে চাপাটি দেখতে পাচ্ছ না ।
-- রঞ্জন আমি ভুল করেছি । আমার মেয়েটা বেঁচে নাই। আমি তোমার মামলা এই মাসে তুলে নিব ঈদের আগে ।
-- মোতালেব চুপ কইরা আমার সাথে নাম ধান খেতে। না নাইলে কিন্তু কুপ দিমু ।মোতালেব রঞ্জনের কথা
মত ধান খেতে নামে শিমুল গাছটা নিছে যায় । মোতালেব ভয়ে কাঁপতে থাকে তাছাড়া রাতে খারাপ
স্বপ্ন দেখছে । রঞ্জন বলে মামলা তুই কি শেষ করবি হারাম জাদা । কেউ কি আমাদের বিপক্ষে সাক্ষী
দিবে মনে করছ । হাঁটু গেরে বস হারামি হাত দুটা পিছনে দে।
--- রঞ্জন বাবা আমাকে মাপ করে দাও ।আমাকে মেরে কি হবে বলল ।
---- মোতালেব আমি কি বলছি তরে মারব হারাম জাদা । আজান দিলে তরে জবাই করমু ।
মোতালেবের কোন আকুতি শুনল না রঞ্জন । চিৎকার দিতেই গামছা দিয়া মুখ বেদে মোতালেব কে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলল । রঞ্জনের সারা শরীর রক্তে ভরে গেল । দা আর চাপাটি নিয়ে আবার সাইকেলে চালাতে লাগলো গ্রামের ভিতর দিয়ে । একটা পুকুরে এসে দা আর চাপাটি ফেলে দিয়ে ছালার ব্যাগ থেকে সাবান বের করে ভাল করে গোসল করল । কটিয়াদি হয়ে চালাক চর বাজারে এসে সাইকেল টা রাস্তায় ফেলে ঢাকা হয়ে আবার ভারতে ।
পনের দিন পরে আবার রঞ্জন গ্রামে এলো । অজ্ঞাত লোকের নামে মামলা হয়েছে । পরীর কবরের কাছে গিয়ে বলল পরী আমাকে মাপ করে দাও । তিন বছরের মাথায় রঞ্জন কিন্তু একে বারে পাগল হয়ে যায় ।
কিন্তু কোথায় রঞ্জন হারাল আজও কেউ জানে না । হয়ত এমন হাজার পাগলের ভিড়ে আছে ঐ পরীর রঞ্জন ।।
কারো জীবনের সাথে কিছু মিলে গেলে দুঃখিত । এটা একটা গল্প

এই বেশ ভালো আছি


------------------------------- সেলিনা জাহান প্রিয়া
আমি নোনা জলে সিক্ত আঁখিতে চিৎকার করে বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায় ।
আমি পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে একবার নিশ্বাস ভরা বুকে বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায়।
আমি সমুদ্রতীরে গোধূলী লগ্নে একচিলতে শেষ রোদকে বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায় ।
আমার প্রতিটি হৃদকম্প তোমাকে বুকে জড়িয়ে বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায়
আমি মাঝে মাঝে কবিতার সিক্ত নীলাম্বরীকে বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায় ।
আমি মধ্য রাতে ডুকরে কাঁদার কারণ তোমাকে বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায় ।
আমি তোমার 'সেই কথা' যা কাউকে বলা বারণ তা বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায় ।
আমি তোমার ভাগ্য রেখা আমিই সেই হাতের গণক তা বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায় ।
আমি তোমার প্রতি ফোঁটা অশ্রু জলের সেই লবণ তা বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায় ।
আমি থেমে থাকি পথের প্রান্তে নিশ্চুপ উত্তরহীন চোখে কিছু বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায় ।
আমি নিঝুম রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমাকেই শুধু বলতে চাই
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায় ।
আমি বৃষ্টির জল চোখ ছুয়ে দেখছি সেটা মনের হাজার অনুভুতির যোগফল
অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায় ।
তোমার জন্য আমার আমার শেষ অনুরোধ কখনো পারলে ভালবেসো আমায়
তবে তোমার মত করে না ! আমার মত করে
যেখানে চাওয়া থাকবে না, থাকবে না কোনো প্রাপ্তি
থাকবে শুধুই প্রতিক্ষা অনেকটা পথ বাকী
তোমার জন্য এখন আমি কারো প্রশ্নের জবাবে
ঠোঁটের কোণে নিষ্প্রাণ হাসি ঝুলিয়ে বলি,
" এই বেশ ভালো আছি... ভালবাসার মানুষটার জন্য

Thursday, May 14, 2015

নীরব ঘাতক ................................. একটি গল্প



মেয়েটির নাম কাজল এ যেন গরিবের ঘরে চাদের আলো । বয়স আর কত পনের কিন্তু এ বয়সে সে সবার চোখে পড়ার মত মেয়ে । এ বছর ক্লাস নাইনে পরে । কাজলের একমাত্র ছোট ভাই সাত বছরের তনু সারা দিন বোনের সাথে ঝগড়া লিগেই থাকে । কাজলের মা আছে কিন্তু বাবা  থেকেও না থাকার মত ।
কাজলের মামারা কাজলদের বেশির ভাগ দেখা শুনা করে । এখনো কাজলের বাবার ভিটায় থাকে । কজল খুব শান্ত মেয়ে । স্কুলে বিনা বেতনে পরে ভাল ছাত্রি আর উপ বৃত্তি টাকাও পায় । কাজলের মায়ের খুব সখ মেয়ে যদি এস এস সি পাশ করে তবে তাকে নার্সিং এ ভর্তি করে দিবে । পাশের একটা রাইস মিলে কাজ করে কাজলের মা । শরীর টা ভাল না কয়দিন যাবত । তাই কাজে যেতে পারে নাই । রাইস মিলের মালিক
বাতেন মিয়া আবার খুব আদর করে কাজলের মাকে । কারন সে খুব পরিশ্রমী ও কাজে ফাকি দেয় না । ঈদেরর দিন গুলোতে বা বিশেষ দিনে কাজলের মা আবার বাতেন সাহবের বাড়িতে কাজ করতে যায় । বাতেন সাহেবের স্ত্রী কাজলের মা মানেই শান্তি ।
রাতে কাজল আর তনু পড়ছে এমন সময় তনু বলে আপু
... তুমি এত পড় কেন তোমার জন্য আমাকেও বেশি পড়তে হয় ।
... আমার বেশি পড়া তাই বেশি পড়ি ।
--- তাহালে বলছ আমার কম পড়া । ওকে আমি উঠছি ।
---- কাজল তনুর চুল ধরে বলে ফাকি বাজি । আমার সাথে পড় ।
---- তোমার সাথে পরে কই হবে । মা বলেছে তুমি নার্স হবা । আমি ছেলে ।মা বলেছে ছেলেরা নাকি নার্স
       হয় না ।
 ---- তাহালে তুই কি হবি
---- ট্রাক ড্রাইভার
---- এটা হলে কি হবে
--- কি হবে মানে তাহালে মাকে আর ট্রাক থেকে ধান নামাতে হবে না। দেখিনা । সবাই ট্রাক ড্রাইভারে
     অস্তাদ ডাকে ।আর তোমারে বিয়া দিলে আমি গাড়ি নিয়া আনতে জামু । সবাই কইব তুমি ওস্তাদের
     বোন ।
কাজল ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে আমার লক্ষ্মী ভাই যাও আর পড়তে হবে না । কজলের মা ও হাসে ছেলের কথা শুনে । বলে আল্লাহ্‌ তোমার আশা পুন্য করুক । অনেক সুন্দর গাড়ি যেন চালাইতে পার বাবা তুমি ।

কাজলের মাকে  আজ বাতেন সাহেব বলল-- শুনছ কাজলের মা  কালকে আমার মেয়ে কে দেখতে লোক জন আসবে । সুনলাম তোমার কাজল হাতে খুব সুন্দর মেহেদি দিতে পারে । তোমার ছেলে মেয়ে কে নিয়া কালকে সকালে আমার বাড়িতে চলে আইস । তোমার ভাবী কিন্তু তোমার অপেক্ষা করবে । তুমি যাওয়া মানে তোমার ভাবির হাই প্রেসার লো হবে । কাজলের মা  বলে - ভাই জান সকালেই আসব , ভাবীকে চিন্তা করতে মানা কইরেন ।
খুব সকালে কাজল আর তনু কে নিয়ে কাজলের মা চলে আসে বাতের সাহেবের বাড়ি । কত কাজ করছে মা । কাজল চেয়ে চেয়ে দেখছে  মায়ের কষ্ট । কিন্তু কাজল লক্ষ্য করল বাতের সাহেবের মেয়ে কাজল কে বেশি একটা পছন্দ করছে না। কারন কাজল দেখতে  তার  চেয়ে অনেক সুন্দর । তনু বলল - আপু চল আমারা  আমাদের বাসায় যাই । এখানে ভাল লাগে না। এমন সময় একটা ছেলে পিছন থেকে বলল -
কি নাম তোমার-  আমার নাম তনু
সাথে কে তোমার - আমার বোন কাজল আপু
বা দারুণ তো চাদের আলোর নাম কাজল
আই কাজল এই দিকে আসো আমি বাতেন সাহেবের ছেলে আমার নাম রাজিব
-- সালাম নিবেন ভাইজান
-- হুম নিলাম কোথায় বাড়ি
-- আপনাদের রাইস মিল থেকে একটু সামনে
-- হুম কি কর
-- আমি ক্লাস নাইনে সাইন্সে পড়ি আর আমার মা হলেন ঐ যে উনি ।
-- রাজিব আর বুঝতে অসুবিধা হল না যে সে খুব গরিব ঘরের মেয়ে ।
রাতে মায়ের সাথে  কাজল আর তনু বাসায় ফিরল । সারা রাস্তা তনু বলল ঐ বাড়িতে রাজিব ভাই অনেক ভাল । আমাকে অনেক আদর করেছে ।  কাজলের মা  বলল- রাজিব ছেলেটা বাপের মত ভাল হয়েছে । কাজল হাসতে হাসতে বলল মা আসলেও ছেলেটা ভাল কি সুন্দর করে কথা বলে । আমাকে বলল - শুন কাজল আমাকে লজ্জা পাবে না । লেখা পড়ার কোন কিছু লাগলে আমাকে বলবে ।
প্রায় স্কুলের আশা যাওয়ার পথে কাজলের সাথে দেখা হয় রাজিবের । মাঝে মধ্য কথা হয় । রাজিব ধীরে ধীরে কাজল কে বুঝতে লাগল ধনি গরিব সব মানুষ সমান । এক বছরের মধ্য রাজিবের প্রেমে পরে গেল কাজল । দিনে দিনে দুজনের প্রেমের গভীরতা বাড়তে লাগলো । কাজলের মা অনেক রাত পর্যন্ত রাইস মিলে কাজ করে । প্রায় পড়ানোর জন্য আসে রাজিব । তনু খুব খুশি হয় রাজিব আসলে কারন তনুর জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে রাজিব ।
বিকাল থেকে বৃষ্টি পরছে সন্ধ্যায় রাজিব আসছে কাজলের বাসায় । অন্য দিন অবশ্য পড়ার টেবিলে তনু থাকে আজ কিন্তু তনু ঘুমাচ্ছে। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে বিদ্যুৎ নাই । হারিকেনের আলো  জলছে রাজিব
কাজলের হাত ধরে হালকা আদর করছে । এক সময় আর কাজল নিজেকে সামলাতে পারলো না । রাজিব ভালবাসার ছলে পেয়ে গেল কাজলের  শরীর । কাজল বিশ্বাস করল রাজিব কে । কিন্তু তিন মাসের এই  কাজল অনুভব করল যে সে কনসিপ করে ফেলেছে । মাঝে মাঝে বমি হচ্ছে । মেয়ের শরীর যে খারাপ মা একটু একটু টের পাছে কিন্তু কি হয়েছে সে জানে না ।
রাজিব কে কাজল খুলে বলল যে সে গর্ভবতী এ কথা শুনে রাজিব বলল -
--- বল কি? কাল সকালে আমার সাথে চল ক্লিনিকে এখন বাচ্চা রাখা যাবে না ।
--- কাজল বলল- শুন রাজিব এটা কেমন কথা । তুমি না বললে আমি যখন চাইব তখনই তুমি মাকে বিয়ে করবে ।
--- কাজল পাগলামি কর না সামনে আমার অনার্স পরীক্ষা । একটা বাচ্চা নষ্ট করলে কিছু হবে না ।
--- না রাজিব আমার জীবন থাকতে আমি বাচ্চা নষ্ট করব না । এই কথা শুনা মাত্র রাজিব কাজলের গালে চর মারে আর বলে-
সব ছোট লোক এক যাতের । যাও আমার কথা না শুনলে কিন্তু তোমার ক্ষতি হবে । আমার বাবা হয়ত আমাকে বকাজকা করবে । কিন্তু এমন খারাপ মেয়ে কে কি মেনে নিবে। আর এ বাচ্চা যে আমার তার কোন প্রমান তোমার কাছে নাই । এই বলে রাজিব চলে যায় , দূর থেকে ছোট তনু দেখল যে বোন কাঁদছে । তনুও বুঝতে পারলো যে আমার বোন কোন কষ্ট পেয়েছে । তনু বোন কে জড়িয়ে ধরে বলল - আপ্পু কান্না করনা । আমি বড় হয়ে রাজিব কে মেরে দিব ।
সারা রাত কান্না করল কাজল । ভাবতে লাগলো সে তার মাকে ঠকিয়েছে । মায়ের আশা নষ্ট করেছে । সবাই যদি জানে কি ভাবে মুখ দেখবে সমাজে । মামারা কি মনে করবে ।
ফজরের আজান মসজিদ থেকে ভেসে আসছে । কাজলের মা নামজের জন্য ঘুম থেকে উঠে মেয়ে কে ডাক দিচ্ছে - কি রে মা কাজল ঘুম থেকে উঠ । কিন্তু কোন শব্দ নাই । মা কাজলের ঘরে ডুকে ও আমার আল্লাহ্‌রে বলে একটা চিৎকার দেয় ।
কাজল আর নাই । চাদের মত কোমল শান্ত সুন্দর মেয়ে গলায় ফাস নিয়েছে ।
সকাল বেলায় আশপাশের সবাই এলো গরিবের মেয়ে চেয়ার ম্যান ও বাতেন সাহেব বলল হয়ত কোন অভিমানে সে ফাসি নিয়েছে । কাজলের মা বোবা হয়ে রইল । থানা ম্যানেস করে চেয়ারম্যান সাহেব আর বাতেন সাহেব কাজল কে মাটি দিল ।
তনু বোনের সাদা খাতায় একটা পুতুলের আঁকা ছবি দেখলও । আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে অনেক দূর সবাই ভুলে গেছে কাজল কে । সাত বছরের তনু এখন ২১ বছরের যুবক । লিখা পড়া তেমন করতে পারে নাই । গাজী পুর তুরাগ পরিবাহনে হেল্পারি করতে করতে এখন পাকা ড্রাইভার ।তনু বাড়িতে আসলেই বাতেন সাহেবের বাড়িতে যাবে । খুব সুন্দর মনের একটা মানুষ । এখন রাইস মেইল দেখা শুনা করে রাজিব ।
রাজিব কে দেখে লম্বা একটা সালাম দেয় তনু ।
---কেমন আছেন রাজিব ভাই
--- আরে তনু যে ভাল আছি তুমি কেমন
--- আমি আপনার দোয়ায় ভাল । রাজিব ভাই আমি জীবনে ছোট বেলায় যে আদর পেয়েছি সেটা আপনার কাছ থেকে ।
---- রাজিব তনু কে কাছে বসায়
---- তনু দেখলও যে রাজিব একটা মাইক্রো কিনেছে । তনু বলল রাজিব ভাই  আমি কিন্তু তিন বছর মাইক্রো চালাইছি । যদি কোন দিন ড্রাইভার চাকরি দেন আমাকে কিন্ত নিবেন । আপনার কাছে থাকলে
আমি কিন্তু ভাল থাকব । তা ছারা নিজের গ্রামে থাকলাম ।
ছয় মাস পর তনুর চাকরি ঠিক হল রাজিবের গাড়ির ড্রাইভার হিসাবে । তনু গাড়ির খুব যত্ন নেয় । তাছারা রাজিবের সব কাজ ও হুকুম ঠিক মত পালন করে । রাজিবের স্ত্রীও তনুকে খুব আদর করে । কিছু দিন আগে রাজিবের বোন ক্যান্সারে মারা যায় । বাতেন সাহেবের একমাত্র ওয়ারিশ এখন রাজিব । রাজিবের স্ত্রীর বড় ভাই রাঙ্গামাটি ফরেস্ট অফিসার । রাজিবের স্ত্রী গর্ভবতী সাত মাসে পরেছে তাই ঠিক করল রাঙ্গামাটি যাবে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে ।  দিন তারিখ ঠিক রাজিব স্ত্রী   কে নিয়ে গাজী পুর কাপাসিয়া থেকে রওনা দিল রাঙ্গা মাটির পথে । চিটাগাং এসে টাইগার পাঁশে একটা হোটেলে দুপুরের খাবার খেল । তনু গাড়ি চালাছে এখন গাড়ি ঠিক বেতবুনিয়া পারি দিয়ে আরও সামনে যাচ্ছে । চার দিক অনেক বড় বড় পাহার আঁকাবাঁকা আর উচু নিচু রাস্তা । চার দিক সবুজ আর সবুজ । রাজিব ও তার স্ত্রী  অবাক হয়ে দেখছে পাহার । গাড়ি চলছে পাহাড়ের চুড়ার দিকে আঁকা বাকা হয়ে ।
রাজিব কে বলল তনু একটা কথা বলি রাজিব ভাই
--- হ্যাঁ তনু বলল কি বলবে ?
--- আল্লাহ্‌ মানুষ কে তার সব আশা পুন্য করে জানেন ।
--- হ্যাঁ জানি তনু । তোমার কি আশা পুন্য হল শুনি
--- এই যে আপনার কাছে থাকা চাকুরি করা
---- এটা তোমার সততার জন্য
---- হ্যা রাজিব ভাই । তবে একটা কথা বলি আমি যখন ক্লাস ওয়ান পড়তাম তখন
    কিন্তু আপনি অনেক সুন্দর ছিলেন । তাই নাই
---- হ্যাঁ পনের ষোল বছর আগের কথা ।
--- তনু বলল ভাবী জানেন । রাজিব ভাই কিন্তু আমার বোন কে পড়াত !
---- তাই নাকি তনু তুমি আগে তো বলনি ।
----  থাক ঐ কথা তনু ।
--- না না রাজিব ভাই  আপনি ভয় কইরেন না । আমি শুধু আজ একটা কথা বলব - রাজিব ভাই
     আপনাকে
--- কি কথা তনু? অন্য সময় সুনব
---- রাজিব ভাই এ রাঙ্গামাটির সব রাস্তা আমার চেনা । আগে হানিফ পরিবহনে কিছু দিন হেল্পারি
      করেছি । আজ কথা তা আপনাকে শুনতে হবে ।রাজিবের  স্ত্রী বলল কি  কথা তনু বল শুনি।
     ভাবী  রাজিব ভাই আমার বোন কে খুব ভালবাসত । আমার অবুঝ বোন টা নার্স হতে চেয়ে ছিল
     কিন্তু রাজিব ভাই এর জন্য হল না ।
--- এ সব কি বলছ তুমি তনু রাজিব চিৎকার করে বলল তোমার মাথা ঠিক আছে
---- তনু হাসতে হাসতে বলে রাজিব ভাই চিৎকার করে লাভ নাই । গাড়ি আমি চালাই । সত্য বলুন
     না হয় এই গাড়ি নিয়ে আমি পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে যাব ।
--- তনু কোন রকম পাগলামি কর না । আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট ।
---- তনু চিৎকার করে বলল কুত্তার বাচ্চা সেই দিন আমার বোন ও প্রেগন্যান্ট ছিল । তুই তাকে
      বিয়ে    করিস নাই বলে গালায় ফাস নিয়েছিল । আজ তোর স্ত্রী প্রেগন্যান্ট খুব মায়া লাগছে তাই না। আমার ও আমার বোনের জন্য সেই দিন মায়া লেগেছিল  বলে--চলন্ত অবস্তায়   
নোহা মাইক্রো গাড়িটা উচু পাহারের উপর থেকে  একদম ছিটকে ফেলে দেয় । হাজার হাজার ফিট ঢালু নিচু পারের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচের দিকে পরতে থাকে । এই গাড়ির সবাই রাজিব তনু ও রাজিবের স্ত্রী মারা যায় ।
 সবাই জানে এটা একটা দুর্ঘটনা মাত্র কিন্তু আসল ঘটনা আজও কেউ জানে না ।

Tuesday, May 12, 2015

আশ্চর্য তবু জীবন ..........................................।।



জগতে কে আছে বলো
কে তোমায় করবে ধন্য?
রোজকার বেচাকেনার হাটে
না ভেবে পন্য ।

মানুষ সৃষ্টি করেছেন যিনি
তিনিই করেছেন অর্থের সৃষ্টি
ব্যবধানের চূড়ায় যে রীতিনীতি
সে কেবল মানুষেরি সৃষ্টি ।

তোমরা যে বল দিবস রজনি,
ভালবাসি ভালবাসি
ভালবাসা কারে কয়
আসলেই কারে কয়?

সে'ই জানে যার ভালবাসা হয়
সেকি কেবলি যাতনাময়।
সেকি কেবলই চোখের জল?
সেকি কেবলই দুখের শ্বাস?

জীবন যে এক অর্থহীন তরী
বাধিয়া রাখিবার নাই তার শক্তি
বিধাতার প্রতি রাখিয়ো ভক্তি
কল্যানশ্রমে হইয়ো ব্রতী ।

চোখ মেলিয়া তাকাও এবার
জীবনের মানে খুঁজো না আর;
যতই খুঁঁজিতে চাইবে ততই তুমি
হইবে দু:খী
....আশ্চর্য তবু আমরা জীবন ভালোবাসি

Wednesday, May 6, 2015

একেই বলে অতি চালাকের গলায় দড়ি.......( ছোট গল্প )


.............................................................................. সেলিনা জাহান প্রিয়া


ট্রেনে কি টিকেট লাগে ! কত জন মানুষ ট্রেনে টিকেট কাটে । টিটি কে কিছু টাকা দিলেই ঢাকা । বোকা মানুষ ট্রেনের টিকেট কাটে । খুব গর্ব করে কথা গুলো বলল গফুর মিয়াঁ । গফুর মিয়াঁর বাড়ি কিশোর গঞ্জ , করিম গঞ্জ, জাফ্রাবাদ গ্রামে । ঢাকায় তার বছরে এক দুবার আসতে হয় । তিন বার মেট্রিক ফেইল কিন্তু ভিলেজ রাজনেতি খুব ভাল পারে । পান ও সিগারেট খুব পছন্দ । নিজেদের লোক জনের মামলা এই গফুর মিয়াই চালায়।
ইমুর গ্রীষ্মের ছুটি শেষ - গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা আসবে বাতেন রিক্সা নিয়া আসছে । ইমু রিক্সায় উঠে বলল আমলি তলায় একটু দাড়িও এক কাপ চা খেতে হবে । বাতেন সাথে উঠল ।  আমলি তলা নুরু মিয়াঁর চায়ের দোকানের চা ইমুর খুব পছন্দ । চায়ে চুমুক দিতেই গফুর মিয়া কি নাতি কেমন আছ । ইমু বলল ভাল । আপনি ভাল আছেন - হ্যাঁ আমি ভাল তা কোথায় যাও ।
-- আমি ঢাকায় যাচ্ছি
-- ও ভাল আমি তো আজ ঢাকা যাব । বাসের অপেক্ষায় আছি
-- বাসে ঢাকা যাবেন
-- না নাতি যাব ট্রেনে । আর এখান থেকে বাসে একরাম পুর । তার পর রেল ষ্টেশন ।
--- ও তাহালে আমার সাথে ঐ পর্যন্ত রিক্সায় চলেন। যেতে যেতে কথা বলা যাবে । গফুর মিয়া বলল তাহালে তো নাতি ভালই হয় । এই বলে ইমুর রিক্সায় উঠলো গফুর মিয়া । রিক্সায় উঠে বলল -  নাতি তো দেশের বাহিরে পড়া লিখা কর তাই না । সুনলাম তুমি নাকি সব ধর্ম নিয়া খুব ভাল ভাবে চর্চা কর । কিন্তু তুমি নাতি মুসলমানের সন্তান । তাই নিজের ধর্মের দিকে খেয়াল রাখিও , । ইমু একটু হেসে বলল - দাদা সকল ধর্ম  মানুষ কে শান্তির কথা বলে। ভাল কাজ করতে বলে । তবে প্রেক্ষা পট হয়ত ভিন্ন । এই কথায় কথায় পাচ মেইল রাস্তা এক সাথে চলে আসলো । ইমু টিকেট কেটে নিল ।আর বলল-
কি দাদা টিকেট নিবেন না ।
-- নাতি সবার টিকেট লাগে না ।
-- তাই নাকি দাদা , যদি রাস্তায় সমস্যা হয় ।
-- না, নাতি কোন সমস্যা হবে না । তোমার ভয় বেশি তুমিই কাট । ইমু মনে মনে একটু হাসল- এই লোক রাস্তায় আমাকে কত হাদিস শুনাইল কিন্তু নিজেই একটা বটপার ।তখন বছর তিনেক হল ইন্টার সিটি ট্রেন চালু হয়েছে ।  ঢাকা থেকে কিশোর গঞ্জ একটাই মাত্র ইন্টার সিটি ট্রেন -নাম এগার সিন্দুর । যাই হোক ইমুর পাশেই এসে বসল গফুর দাদা । তখন মাত্র ৪৫ টাকা টিকেট । সন টা ১৯৮৭ সালের দিকে ।
যাই হোক ট্রেন ছাড়ল । ইমু জানতে চাইল তা দাদা ঢাকা কেন ? গফুর মিয়া বলতে লাগলো কিছু মামলা আছে জমিন নিয়া আর কিছু ব্যক্তি গত কাজ আছে । নাতি চা খাবে ? ইমু অন্য দিনের মত হেসে না দাদা কিছু খাব না। ইতিমধ্য টিটি আসলো ইমু টিকেট দেখাল । গফুর মিয়া ১০ টাকা দিল , টিটি চলে গেল । তার পর দেখলাম পুলিশ কে ১০ টাকা দিল নরসিংদী আসার একটু আগে । এখন ইমুর দিকে চেয়ে বলল , এই পুলিশ ভাই বিমান বন্দর গিয়ে আমাকে  একটা টিকেট দিবে । বাজি মাত ২০ টাকায় ঢাকা । কমলা পুর থেকে ৬ নাম্ভার বাসে আটআনা দিয়া গুলিস্তান । ইমু আবার ও হেসে বলল দাদা আপনি পারেন ও ।
টঙ্গি আসার পর ট্রেন থামল সাধারণত টঙ্গি ট্রেন থামে না । সবাই ছুটাছুটি  করছে । ইমু কিছুটা অবাক হল । গফুর মিয়া বলে নাতি কিছু না । মানুষ একটু মজা করে সিগন্যাল পাইছে নামবো ।
কিন্তু সেই দিন মোবাইল কোট বসেছিল টঙ্গি । গফুর মিয়াঁর টিকেট চাইলো ম্যাজিস্ট্রেট । গফুর মিয়া বলল - টিটি কে টাকা দিয়েছি । ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ৩০০ টাকা ফাইন করলো । গফুর মিয়া ম্যাজিস্ট্রেট কে বুঝাতে চাইল যে সময়ের জন্য টিকেট করতে পারে নাই । ইমু বসে বসে দেখছিল গফুর মিয়াঁর মুখ খানা । মোবাইল কোটে বেশি কথা বললে জরিমানা বাড়তে থাকে । গফুর মিয়র ৩০০ টাকার ফাইন ৯০০ টাকায় গড়াল । গফুর মিয়াঁর কাছে এত টাকা নাই । ইমুর কাছে বলল - নাতি তুমি আমারে ৮০০ টাকা দাও । আমি ঢাকায় গিয়ে দিচ্ছি । ইমু বলল- এত টাকা দেয়ার মত টাকা নাই । আসলে ইমুর পকেটে টাকা ছিল । কিন্তু ইমুর মনে হল এই বাটপার টার একটু সাস্তি হওয়ার দরকার । তাই ইমু আবার ও হেসে বলল- দাদা আমি ছাত্র মানুষ। এত টাকা কি সাথে থাকে । গফুর মিয়া কে পুলিশ হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে নিয়ে গেল । পরে ইমু জানতে পারলো যে ৭ দিন জেল খেটে প্রায় ৯০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছারা পেয়েছে ।
 একেই বলে অতি চালাকের গলায় দড়ি...........................।।

Tuesday, May 5, 2015

অনু গল্প ............... জিনের বাদশা


রাত তিনটা আমি লিখছি । তখন মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল । একটা খুব সুন্দর নাম্ভার , এতে রাতে কে ফোন দিল একটু চিন্তা করে সেল ফোনটা হাতে নিলাম । ভাবছি রিসিভ করব কি না! লাইন কেটে গেল । আবার ফোনটা বাজতে লাগলো ।এবার রিসিভ করলাম । খুব সুন্দর করে বলল- আসসালামুয়ালাইকুম ওর রহমতউল্লাহ ওর বারাকাতউল্লাহ
আমি কণ্ঠ শুনে খুব মুগ্ধ হলাম। আমি ও বলাল - অলাউকুম সালাম । এখন সে আবার বলল - মা আপনার মন ও শরীরর ভাল আছে তো ?
-- হ্যাঁ আমি ভাল কিন্তু আপনি কে
-- মা জননী আপনি আমাকে চিনবেন না তবে পরিচিয় দিলে চীনতেও পারেন , মা জননী ।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম কে আপনি! আমি তো আপনাকে চিনি না ।
-- মা গো আপনি আমাকে চিনবেন না । আমি হলাম জীন ।
-- কি জীন আপনি ! বাহ জিনেরা আবার সেল ফোন ব্যবহার করে
-- জি, মা জননী । মোবাইল হওয়াতে এখন আর মানুষের শরীররে ভর করতে হয় না ।
-- বাহ দারুণ তো । তা জীন চাচা কি মনে করে আমাকে ফোন দিলেন এত রাতে ।
-- মা জননী আপনি অনেক দুঃখী একজন নারী । আপনার দুঃখ দেখে আমি ফোন না করে পারলাম না।
-- ঠিক বলছেন , জীন চাচা , আসলেই আমি দুঃখী একজন নারী । আমার দুঃখ গুলো কি আপনি জানেন ?
-- কি যে বলেন মা জননী । আমার বয়স এখন সাত শত বছর । আপনার জন্য আমার অনেক মায়া হয়।
মা জননী । আমি আপানার সব দুঃখ বালামুসিবত সব দূর করে দিতে চাই ।
-- জীন চাচা, শুনে খুব খুসি হলাম । আপনি আমার দুঃখ গুলো দূর করে দেন ।
-- মা জননী , আপনি সহজ সরল নারী , যাকে বিশ্বাস করেন সেই , আপনাকে কষ্ট দেয় , আপন জন
আপনাকে কষ্ট দেয় । সবাই আপবাকে সামনে ভাল বলে পিছনে আপনাকে ক্ষতি করে , ঠিক কি না মা
জননী । মা জননী আমি আছি আপনি কোন চিন্তা করবেন না । আমি আপনার সব কাজ করে দেব।
আপনি আমার মেয়ের মত মা জননী ।
আমি একটু কান্না কান্না কণ্ঠে বললাম জীন চাচা- আপনি সত্যি একজন ভাল জীন । হয়ত আল্লাহ ইচ্ছা আপনি আমাকে ফোন করেছেন । তা জীন চাচা আপনি কোথায় থাকেন একটু বলবেন ।
-- মা জননী আমি কয়েকাফ ছিন ছিন নগরীতে থাকি ।
-- জীন চাচা আপনার দেশ টা কেমন । আমাদের দেশের মত কি- চোর বাটপার, টাউট আছে ।
-- নাউজুবিল্লা এটা কি বল মা । জিনরা খুব ভাল তবে কিছু খারাপ জীন আছে ।
-- জি, জীন চাচা , শয়তান তো খারাপ জীন ছিল! তাই না চাচা।
-- জী, মা জননী । তবে আমি একজন নেক ফরেজগার জীন ।
রাত তিনটা থেকে জীন চাচা আমার সাথে কুরান হাদিস অনেক বুঝাল । আমাকে বলল মা জননী তোমার সামনে ভয়ানক বিপদ । আল্লাহ তোমার হেফাজত করুন । আমি একটু মনে মনে হাসলাম । আমার কথা শুনিয়া আমার স্বামী ও হাসিতে লাগিল । জিনের সাথে খুব শান্ত ভদ্র ভাবে কথা বলে যাচ্ছিলাম । আমি যে খুব ভয় পাইছি এমন একটা ভাব ধরলাম । জীন চাচা বলল - মা জননী তোমার স্বামী কোথায় । আমি জীন চাচার সাথে একটু মজা করার জন্য বললাম-
-- জীন চাচা ও তো বিদেশ থাকে। আমেরিকায় । শুধু ডলার পাঠায় কিন্তু দেশে আসে না। কিন্তু গত
কয়েক মাস যাবত ডলার পাঠাচ্ছে না।
-- কোন চিন্তা করিও না মা। আমি তোমার স্বামী কে দেশে আনার ব্যবস্তা করে দেব ।
-- জীন চাচা সত্যি আসবে তো
-- হ্যাঁ মা জননী আলবৎ আসিবে । কিন্তু মা তোমার স্বামী কে এক বিদেশী যাদু করেছে । সব টাকা ঐ
মহিলার পিছনে খরছ করছে ।
-- এখন আমি কি করব জীন চাচা
-- মা জননী আল্লাহর উপর ভরসা রাখ । আমি আগামী ৭ দিনের মধ্য তোমার অবাধ্য স্বামী কে তোমার
বাধ্যগত স্বামী বানিয়ে পাঠিয়ে দিব।
-- সত্যি জীন চাচা । আমার বিশ্বাস হয় না।
এদিকে আমার স্বামী হাসতে হাসতে পাশের রুমে চলে গেল । আর জীন চাচা বলতে লাগলো
-- মা জননী কিছু মনে নিও না । সব কাজ করতে হাদিয়া লাগে ।
-- চাচা কত হাদিয়া লাগবে । আপনি টাকার চিন্তা করবেন না। আমার কাজ টা করে দেন । জীন চাচা আমার কাজ টা করে দিতে রাজি হল । হাদিয়া চাইল এক লক্ষ এক টাকা আমি রাজি হলাম টাকা দিতে ।
এবার জীন চাচা বলল- মা জননী আমার এই নাম্ভার এ বিকাশ করলে হবে ।
আমি বললাম জীন চাচা আপনাদের দেশে ও কি বিকাশ চলে।
-- না মা জননী , আমি নিজেই মানুষের রুপ ধারন করে- তোমাদের মুল্লুক থেকে টাকা তুনে নেব ।
এখন আমি হাসিয়া বলিল্যা-জিন চাচা আপনি যদি মানুষের রুপ ধারন করে বিকাশ থেকে টাকা নিতে পারেন । তাহালে দয়া আমার বাসায় আসিয়া নিয়া জান । এই কথা বলা মাত্র আমাকে বলল- বেয়াদব মূর্খ বিকাশ করিতে না পরিলে আগেই বলিতে । শুধু শুধু আমার টাইম নষ্ট করিলে।
আমার স্বামী ফোন টা হাতে নিয়ে জীন চাচা কে বলল- চাচা আমি চলে আসছি আপানাকে আর কষ্ট করিতে হবে না। তার পর এই যে ফোন বন্ধ হল এখন পর্যন্ত জীন চাচার ফোন বন্ধ............।