Tuesday, June 16, 2015

অমীমাংসিত রহস্য........................... ছোট গল্প


--------------------------------------------------------সেলিনা জাহান প্রিয়া
মাঝ রাতে দরজায় কড়া নারার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বিরক্ত ভাব নিয়ে দরজা খুলল ইমু । দরজা খুলেই বিস্মিত কণ্ঠে বলল- আরে কায়েস? এতো রাতে? আয় আয় ঘরে আয় ।
কায়েস একগাল হেসে বললো- দোস্ত অনেকদিন তোকে দেখি না। তোকে দেখতে ইচ্ছে হলো তাই চলে আসলাম। আজ রাতটা তোর সাথেই কাটাবো।
--- ঠিক আছে তোকে দেখে তো আমি অবাক ! যাই হক ! লন্ডন থেকে কবে আসলি ! কত দিন তোর
কোন ফোন নেই । তা আমার সাথে শুধু মাত্র দেখা করবার জন্য এতো রাতে সে চলে আসবি বাসায়! তা তো ভাবতেই পারছি না। এই না হলে বন্ধুত্ব। কি বাহিরেই দাড়িয়ে থাকবি? ভিতরে আস? গল্প করি দুই
বন্ধু মিলে সারারাত।
--- নারে দোস্ত ঘরে বসবো না। চল বাহির থেকে ঘুরে আসি।
--- সে কিরে! এতো রাতে কোথায় যাবি? আর তুই এতো সাহসী হলী কবে থেকে? কিছুদিন আগেও না
সন্ধ্যার পর তুই ঘর থেকে বাসার বাহির বের হতি না? এখন রাত দেড় টা !!
----এখন কি আর সেই দিন আছে! বিদেশ আমাকে অনেক সাহসী করেছে বুঝলি ! চল বাহিরে চল।
ইমু একগাল হেসে উত্তর দিলো চল- সাহসী ছেলে
----আচ্ছা তোর হয়েছি কি বলতো? ঘরে না বসে বাহিরে নিয়ে আসলি । মন খুব ফুর ফুরা । আবার দেখি
এতো চুপচাপ খুব মজা করে কথা বলছিস ! রহস্য কি ?
--- না এমনিতেই। মায়ের জন্য মন কাঁদছিল । কিন্তু মায়ের সাথে দেখা করতে পারলাম না । মায়ের তো
হাইপ্রেসার তাই তাকে আর ঘুম ভাঙ্গালাম না। মাকে খুব মিস করি তাই না বলে চলে আসা ।
---- ভালই করেছিস ! তা তুই সারারাত কোথায় ছিলি?
----- কোথায় আবার কিছু সময় রাস্তায় তার পর ভাবলাম তোর কাছে আসি। তুই ছাড়া এত আপন কে
আছে বন্ধু আমার !!
দুই বন্ধু মিলে সারারাত কত আলাপ হাঁটতে হাঁটতে সাজানপুর থেকে তাদের প্রিয় জায়গা সাহাবাগের সেই চায়ের দোকান । এখন রাত সারে চার টা ।
কায়েস বলল--
----- চল ফিরা যায়
----- ইমু হাসি দিয়ে , অনেক দিন পর এক সাথে হাঁটলাম । তুই বিদেশ জাওয়ার পর আমি বর একা হয়ে
গিয়েছিলাম । আর তুই না বলে এভাবে আসবি ভাবতে পারি নাই ।
----- শুন ইমু আমি কিন্তু তোর জন্য কিছু আনি নাই !
---- আরে নাটু, তুই আসছিস আর কি লাগে । এখন বল কত দিন থাকবি
---- জিবনের জন্য চলে আসলাম আর যাব না ।
---- বলিস কি তোর তো লিখা পড়া শেষ হয় নাই ।
---- আর লিখা পড়া করে কি হবে আমি কি চাকুরি করব নাকি ?
--- তাহালে কি করবি?
---- বাবার মত ব্যবসা । বুঝলি
--- ভাল হল আমি ও ব্যবসা করব !!
---- সত্যি !! তাহালে আয় । সকালে একসাথে নাস্তা খাব ।
কায়েস বিদায় নিল । ইমু বাসায় এসে একটা ঘুম দিল । ঘুম থেকে জেগে দেখে সকাল নয়টা ।
তারাতারি ইমু কায়েসের বাসায় রওনা দিল ।
ইমু বাসায় প্রবেশ করে নিথর পাথর হয়ে দাড়িয়ে । কায়েসের মা ইমু কে জরিয়ে ধরে অজর ধারায় কাঁদছেন। খালাম্মাকে কি ভাবে শান্তনা দেব বুঝতে পারছি না। ইমুর কাছে সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে। পুরো বাড়ি জুরেই কান্নার শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে অনেক মানুষ । ইমুর আস্তে আস্তে বোধশক্তি লোপ পাচ্ছে। এ আমি কি শুনছি। আমি তাহলে এতক্ষণ কার সাথে ছিলাম? কায়েস তো তার বাসায় আমাকে আসতে বললো। কায়েসের লাশটি গাড়ি থেকে নামানো হল। শেষ বারের মতো অবাক হয়ে দেখতে লাগলো ইমু এটা তো কায়েসের লাশ । ইমুর সমস্ত পৃথিবী দুলো উঠলো। মনে হচ্ছে সবকিছু দুলছে। চোখ এর সামনে থেকে সবাই আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। ইমু আসতে আসতে অন্ধকার একটা জগতে হারিয়ে যাচ্ছিল। দূরে কে যেন কান্না করছে। তার মাঝে কে যেন বলছে- আম্মুকে বলিস, আমি আম্মুকে অনেক ভাল বাসি। কায়েস লন্ডনে গত দুদিন আগে মারা গেছে । আজ তার লাশ এসেছে । তাহালে সারা রাত কে ইমুর সাথে এত গল্প করল । তার কাছে এটা আজীবন রহস্য হয়েই রয়ে গেল ।

0 comments:

Post a Comment