Monday, April 6, 2015

অভিশপ্ত নুপুর (ছোট গল্প)




মায়ের হাতে এনে দিল নুপুর গুলো । সুজনের মা নুপুর দেখে হেসে ফেলল । কি রে সুজন কার জন্য নুপুর আর এত সুন্দর কারুকাজ নুপুরের মধ্যে, এক কথায় খুব সুন্দর! কিন্তু বাবা আমার তো নুপুর পরার বয়স নেই ।
আচ্ছা মা রেখে দাও । আমার খুব পছন্দ হল তাই নিয়ে এলাম । সুজনের বাবা হেসে বলল, ওগো নুপুর যখন এসেছে তাহালে সুজনের সখীও আসবে ।
সুজনের একমাত্র বোন বেড়াতে এসে মায়ের আলমারিতে নুপুর গুলো দেখে তার খুব পছন্দ হল ।কিন্তু মা বলল সুজন খুব পছন্দ করে নুপুর জোড়া এনেছে তাই তাকে দেয়া যাবে না । খুব যত্ন করে মা এগুলো রেখেছে ।
এর মধ্য কেটে গেল প্রায় তিন বছর খানেক সময় । সুজনের জন্য পাত্রী দেখা শেষ। যথা সময়ে সুজনের বিয়ে হল । পাত্রীর নাম ঝুমু । দেখতে যেমন সুন্দর কথা খুব আস্তে বলে । বিয়ে ঠিক ঠাক হবার পর সুজনের সাথে বেশ টেলিফোনে কথা হয়েছে । কথার ফাঁকে একসময় বলল সুজন , ঝুমু তোমার জন্য একটা রহস্যময় জিনিস আমি কিনেছি যা পুরাতন কিন্তু অনেক ভাল লাগার, তোমার দেখলেই পছন্দ হবে । ঝুমু জানতে চাইলে সুজন বলে সেই জন্য তোমাকে বাসার ঘরে অপেক্ষা করতে হবে ।
রাত একটা ঝুমু বাসার ঘরে আজ নববধূ সেজে বসে আছে । সুজন কে সে মাত্র দু বার দেখেছে কিন্তু ফোনে ফোনে খুব কাছের এক মানুস হয়েছে সুজনের কাছে । সুজন ঘরে প্রবেশ করে একটা লম্বা সালাম দিয়ে বলল , ঝুমু তুমি কি জান এই ঘরে একটা নীল পরী আছে । ঝুমা একটু হেসে আস্তে বলল , হ্যাঁ জানি নীল পরী নীল শাড়ি পরে বসে আছে । সুজন একটু হাসে বলল সত্যি তুমি ট্যালেন্ট ।
এবার ঝুমু বলল কোথায় পরীর জন্য কি জানি রহস্যময় জিসিস কিনে রেখেছেন তা দেখান !
সুজন- ও দুখিত আমি নিয়ে আসছি বলে সুজন আবার মায়ের কাছ থেকে নুপুর গুলো নিয়ে আসে ।
ঝুমু নুপুর গুলো দেখে অবাক হয়ে যায় । নুপুর জোড়া হাতে নিয়েই কাদতে থাকে হাউ মাউ করে । নব বধূর এই কান্না সুনে বাসার সবার ছুটে আসে । সুজন অবাক । কি হল ঝুমু তুমি এই নুপুর দেখে কেন কাদছ ! কাদতে কাদতে নুপুর গুলো বুকে জড়িয়ে বলে - সুজন আমার বাসায় একটা ফোন কর । আমি আমার বড় আপুর সাথে একটু কথা বলতে চাই ।
সুজন তারা তারি ঝুমুর বাসায় ফোন করে ফোনটা ঝুমুর কাছে দেয় ।
ঝুমু কাদতে কাদতে বলল - হ্যালো মা আপু কে একটু ফোনটা দাও । ঝুমুর আপু ফোনটা হাতে নিতেই ঝুমু বলল- আপু তুমি কেমন আছ, জানো আপু তোমার নুপুর পাওয়া গেছে । নুপুরের কথা শুনে দুই বোন একসাথে টেলিফোনে কাঁদতে লাগলো।
সুজন বলল - ঝুমু কি আছে রহস্য এই নুপুরে ।
ঝুমু আস্তে আস্তে বলতে লাগলো - আমার বড় আপু রিমুর বিয়ের দিন তার শাশুড়ি এই নুপুর গুলো আপু কে দেয় । আর বলে এটা তাদের পরিবারের পূর্ব পুরুষদের । খুব যতনে যেন রাখে । আপু ঐ পরিবারের বড় বউ। আবার আপুর যদি পুত্র হয় তাহালে সেই পুত্র বধূ এই নুপুর পাবে । তাদের পরিবারের এক রাজ পরিবার ছিল । অনেক যুগ আগে নাকি এই পরিবারের এক রাজার পুত্র সন্তান ছিল না । রাজাকে নাকি কোন নর্তকী অভিশাপ দিয়েছিল । কারন রাজা সেই নর্তকীকে খুব পছন্দ করত । কিন্তু রানি খুব গোপনে সেই নর্তকী কে হত্যার জন্য এক গুপ্তচর কে পাঠায় । গুপ্ত চর তাকে হত্যা করতে বিফল হয় কিন্তু তাকে খুব রক্তাক্ত করে ।
একদিন পরে গুপ্ত চর রাজার কাছে ধরা পরে যায় । নর্তকী জানতে পারে যে রানি এ কাজ করেছে তখন রাজার কাছে রানির প্রান দণ্ড চায় নর্তকী । কিন্তু রাজা নর্তকীর এ দাবী রাখতে অস্বীকার করে কারন সে রানি আর সে যা করেছে এটা রানির অধিকারের মধ্যে পরে । তখন নর্তকী প্রায় মরে যায় যায় অবস্তা । তখন নর্তকী তাকে তাকে অভিশাপ দেয় যদি আমি এই রানির আঘাতের জন্য মারা যাই তাহালে রানি কে আমার এ নুপুর পরে থাকতে হবে যদি নুপুর না পরে তাহালে সে মরা পুত্র সন্তান জন্ম দিবে । এ কথা বলার পরেই নর্তকী মারা যায় । তার পর পর রানি দুই বার মারা বাচ্চা জন্ম দেয় । শেষ পর্যন্ত রানি কে সেই নর্তকীর নুপুর পড়তে হয়েছিল । এর পর রাজার জীবিত পুত্র জন্ম দেয় । এ যাবত কাল এ পরিবারে বড় পুত্র বধূরা এ নুপুর পরে ।
সবাই এ কথা শুনে অবাক । কিন্তু সজল জানতে চায় এ নুপুর হারালো কিভাবে ।
ঝুমু বলল - আপু দুলাভাই আমাদের বাড়িতে বিয়ের সাত দিন পর বেরাতে আসে ঠিক এখন থেকে প্রায় তিন বছর আগের । আমদের এখানে বেড়ানো শেষ করে আবার দুলাভাইদের বাড়িতে যায় কিন্তু কোথায় কিভাবে হারায় তা জানিনা । আপু তার পর থেকে এ নুপুর জোড়া আর খুঁজে পাচ্ছিল না ।
সুজন খুব ভোরে তার পরিচিত এক দক্ষ স্বর্ণকারের নিকট গিয়ে ঐ নুপুর জোরার মত আরো এক জোড়া নুপুর বানায় । দেখলে কেউ সহজে চিনতে পারবে না ।
রিমুর নুপুর পাওয়ার খবরে রিমুর শ্বশুর বাড়ির লোক জন খুব সম্মানে রিমুকে তারা তিন বছর পর আবার গ্রহন করে । কিন্তু সুজন নুপুর দেয়ার সময় রিমুকে নকল নুপুর জোড়া দেয় ।
সময় গড়িয়ে আজ রিমুর খুব সুখের দিন কারন সে মা হতে চলছে । রিমু কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । ঝুমু সুজন রিমুর স্বামী সহ সবাই অপারেশন থিয়েটারের সামনে অপেক্ষা করছে এমন সময় ডাক্তার বের হয়ে এলো , সবাই ডাক্তারের কথা শুনার জন্য দাঁড়ালো ।
ডাক্তার খুব শান্ত ভাবে বলল- আমি দুঃখিত কারন রোগী একটা মৃত্যু সন্তান প্রসব করেছে । সবাই একদম চুপ হয়ে গেল । সুজনের চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি পড়তে লাগলো । কারন সুজন সেই নুপুর জোড়া রেখে নকল নুপুর জোড়া দিয়ে ছিল । সুজনের কান্না দেখে ঝুমু বলল কেঁদো না আপু ভাল আছে । বৃক্ষ বেঁচে থাকলে একদিন ফল আসবে ।
সুজন রিমুর ক্যাবিনে গিয়ে দেখে রিমু ব্যাডে শুয়ে কাঁদছে । সুজন রিমুর মাথার কাছে গিয়ে কান্না করে দেয়। আর বলে আপু নুপুর গুলো কোথায় ? রিমু আপু কান্না ভরা চোখে বলে । ঝুমুকে একটা ব্যাগ দেখিয়ে বলে এই ব্যাগে । সুজন ব্যাগ থেকে নুপুর জোড়া বের করে বলে - রিমু আপু ,দুলাভাই , ঝুমু আমাকে সবাই আমাকে মাপ করে দাও । ঝুমু বলল - সুজন তুমি মাপ চাও কেন ? ঝুমু কারন আমি আপুর নুপুর গুলো বদল করেছিলাম । সুজন আসল নুপুর গুলো পেন্টের পকেট থেকে বের করে দেয় । রিমু আসল নুপুর গুলো হাতে নিয়ে আবারো কাঁদতে থাকে । তখন রিমু স্বামী বলে আমার ছোট বোন এই নুপুর চুরি করে বিক্রি করেছিল আমি গত কাল জানতে পারি । কারন আমার বোন মনে করত এ সব বিশ্বাস করা এক ধরনের কুসস্কার কিন্তু আমার বোন ও গত মাসে এক মৃত্যু মেয়ে জন্ম দেয় । যাই হোক আমরা এ অভিশাপ নিয়েই বাচতে চাই।
সুজন হাসপাতাল থেকে বের হয়ে একটা রিকসা নেয় তখন রাত ১১ টা, আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে জন্ম মৃত্যু আর বেঁচে থাকা এক রহস্য নকল নুপুর গুলো দিকে চেয়ে হাসতে থাকে এমন সময় চেয়ে থেকে রমনা পার্কের কোনে এক সুন্দরি তাকে ইসারায় ডাকে । সুজন রিকসা থেকে নেমে ঐ মেয়েটার হাতে নুপুর গুলো দিয়ে আবার রিকসা উঠে ।
মেয়েটা অবাক হয় কিছু না বলে এত সুন্দর নুপুর গুলো আমাকে দিয়ে গেল ।
মায়ের নাক ফুল ঠিক করাতে সুজন স্বর্ণ কারের দোকানে গেল । কিন্তু চোখ গেল এক জোড়া নুপুরের দিকে । নুপুর দেখেই পছন্দ হয়ে গেল সুজনের । কিন্তু তার নুপুর দেয়ার মত কেউ নেই । তবু সে রূপার নুপুর জোড়া কিনল ।অনেক পুরাতন রূপার নুপুর । আজকাল কেউ এত চওড়া নুপুর পরে না । তা ছাড়া নুপুর গুলোর মধ্য একটা জমিদারী খানদানি ভাব আছে ।

0 comments:

Post a Comment