Friday, May 29, 2015

______বেকার জীবন ও প্রেম.........( ছোট গল্প )




ইন্টারভিউ এর জন্য রেডি হয়েই বসে আছে মিঠু  । প্রতি ইন্টারভিউতেই  দেরি হয় কারন রাত জেগে পড়তে হত । কিন্তু আজ দেরি হয়নি কারন, খুশিতে রাতে  ঘুমাই নি । মিঠু  আজ জানে যে, এই চাকরীটা  হয়ে যাবে । এক বড়-ভাই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে ।  শুধু এটেন্ড করতে হবে আর “কমিশনার” সাহেবের চিঠিটা কোম্পানি ডিজিএম কে দিতে হবে ।  দুপুর বেলা রোদের মধ্যে গিয়ে টিউশনি করাতে হবে না । ছাত্রীর মা পাশে ঘড়ি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করবে না যে, আরো তো পাঁচ মিনিট বাকি আছে এখনই চলে যাবেন ? ছাত্রীর বাবা ছাত্রিকেক পড়ানোর সময় বারবার সন্দেহ নিয়ে উঁকি দেবে না ।
একটা ছাত্রীর বাবার  উপর  অনেক রাগ লুকিয়ে আছে । কোনো একদিন গলির অন্ধকারের মধ্যে পেলে  প্রিয় কয়েকটা গালি দিয়ে ঠাস করে এক চর মারব শালাকে ।
তবে ছাত্রীর মিষ্টি হাসিটা আর দেখতে পাব না । কেউ আর পড়ার বই ছেড়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসবে না । প্রাইভেট মাস্টার মানে সময়ের কিনা একটা গোলাম ।
 মিঠু এইসব ভাবতে ভাবতে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছি । তবে  বাসে যাব না, আজ যাবে রিক্সা । রিক্সা নিয়ে মতিঝিল  গিয়ে নামলো । এখন ও অনেক সময় বাকি দেখে পাশের চায়ের দোকানে বসলো । সাইডেই একটা চশমা পড়া  ছেলে অনেকগুলো কাগজপত্র নিয়ে বসে আছে ।
মিঠু ভাবছে চাকরি টা হলে হয়ত সানু তাকে বিয়ে করবে । প্রাইভেট পড়ানো কোন কাজ না । সানু একটা কথা- মিঠু তুমি বেকার । আর বেকার ছেলের কাছে তাকে তাঁর পরিবার বিয়ে দিবে না।
মিঠুর পাঁশে বসা ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল-
---   ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন ?
----বিরক্তির সাথে জবাব দিল, হ্যা । এখানে আজ কাগজপত্র নিয়ে সবাই ইন্টারভিউ দিতেই আসবে ।
--- তাকে বিরক্ত হতে দেখে মিঠুর মজা লাগল । ইচ্ছে করছিল ঘাড়ে হাত দিয়ে বলি, আরে শালার-ব্যাটা তোরা লোক-দেখানো ইন্টারভিউ দিচ্ছিস চাকরীটা তো আমিই পাবো । তবে কিছু না বলেই চা খেতে লাগলাম, সাথে একটা গোল্ডলিফ নিয়ে জোরে জোরে টান দিতে শুরু করলো ।
কিছুক্ষন পর মৌখিক পরীক্ষা হবে । সবাই রুমের বাইরে লাইন ধরে চেয়ারে বসে আছে । পিয়ন এসে এক এক করে নাম ধরে ডাক দিচ্ছে । মিঠু একটু হাসিও পাচ্ছে কারন, সবই লোক দেখানো । মিঠু  গিয়ে সেই লোকটার পাশেই বসলাম । তাকে বিরক্ত করে দারুন আনন্দ পাচ্ছে মিঠু  । কিন্তু এখন মনে হয় সে বিরক্ত হচ্ছে না । খেয়াল করলো তার হাত-পা কাঁপছে, কপালে ঘাম জমে আছে।
মিঠু  জিজ্ঞেস করলাম,
---- ভাই কোনো সমস্যা ?
-----সে চমকে উঠে বলল, ভাই আমার হাতটা একটু ধরেন ।
----মিঠু তার হাতটা চেপে ধরল । লোকটার প্রতি  তাঁর মায়া লাগল ।
--- লোক টা একটু ভরসা পেল । বলল থ্যাংকস 
--- মিঠু  বলল, এই ইন্টারভিউ দেয়ার দরকার নেই ভাই চলে যান ।
--- সে কাঁপতে কাঁপতে বলল, নারে ভাই এই চাকরীটা আমার পেতেই হবে । নাহলে আমার সুইসাইড ছাড়া
     গতি নেই ।
----মিঠু  পুরাই আশ্চর্য ! সুইসাইড করবেন কেন ?
----ভাই আমার মা নেই । বাবা প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছে । সে নিজের কোনো কাজ করতে পারে না । অথচ আমি তার চিকিৎসা করাতে পারি না । সামান্য টিউশনির টাকা দিয়ে বাজারই হয়না । চিকৎসা কিভাবে করাব ? বোনটা বাবার কাছে থাকে । প্রতি ইইন্টারভিউ দেয়ার পর আমার দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে । কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায়না ।এদিকে ও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । বেতন দিতে পারি না । বলেই লোকটা কেঁদে দিল ।
মিঠু  তার সার্টিফিকেট গুলো হাতে নিয়ে অবাক হলাম । লোকটা এম.বি.এ করে সাধারন জুনিয়র হিসাবরক্ষকের পোস্টে ইন্টারভিউ দেবে । আর আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে কেবল অনার্স পড়েই চাকরী পাচ্ছি । বুকের ভেতরটায় প্রচন্ড ব্যাথা হতে লাগল মিঠু  । তখন নিজেকে নরপিশাচ মনে হচ্ছিল । যেন কারো রক্ত চুষে খাচ্ছি । তাকে সার্টিফিকেট গুলো ফেরত দিয়ে মিঠু  পকেটের কমিশনার চিঠিটা দিয়ে বললাম, ভাই ভেতরে গিয়ে বলবেন আপনাকে মাসুদ সাহেব পাঠিয়েছেন আর এই চিঠিটা দেখাবেন । আজ আপনার চাকরী হয়ে যাবে । বলেই সেখান থেকে বিদায় নিল। মিঠু  ভাবতে লাগলো আমার নিজেরও একটা পরিবার আছে, বাবা ভাল চাকুরি করে । আমার এখনও অনেক কিছু করার সময় আছে, নিজের জন্য নিজের পরিবারের জন্য । আমি সৎ ভাবে আমার চেষ্টা চালিয়ে যাব । আর এবার ফাইনাল পরীক্ষা টা দিয়ে দেব ।
বিকেলে সানুর  এলো মিঠুর কাছে । এসেই বলল-
-- কি তুমি  চাকুরি পাও নাই ।
--- না
-- আসলে তোমার চাকুরি করার ইচ্ছা নাই । আমি তোমাকে তিন মাস সময় দিলাম এর মধ্য চাকুরি
  ও বিয়ে তোমাকে করতে হবে ।
-- দেখ তিন মাস পড়ে আমার অনার্স পরীক্ষা । এ সময় আমি কি করে বিয়ে করি । আচ্ছা সানু চল
  আজ বিয়েটা করি ।
--- না আমি কোন বেকার ছেলে কে বিয়ে করব না । তাছাড়া তুমি ভাল করে জান আমার বড় দুই
   দুলা ভাই ভাল চাকুরি করে । আমি তোমার বাবা মায়ের উপর বুঝা হতে পারবো না ।
--- আমার মা তো তোমাকে বউ করতে চায় ।
--- রাখ তোমার মায়ের কথা । আসলে তোমার মা বাসায় একটা কাজের মেয়ে চায় । না হয় কোন
   মা বেকার ছেলে কে বিয়ে করায় ।
--- দেখ আমি বেকার না প্রাইভেট পড়াই ।
--- পড়াও তো কি জানি । আসলে বড় লোকের মেয়ে খুঁজ গোপনে ।
--- সানু এভাবে কথা বল না।
--- কি ভাবে বলব । আমার ছোট বোন কে তো তুমিই পড়াতে তাই না।
--- হ্যাঁ তাই বলে কি আমি তোমার ছোট বোনকে কি লাভ করি নাকি !
---  যাই হোক । সব শিয়াল একেই ডাক । আমার বোন সিমা কিন্তু এখনো তোমাকে মিস করে
      মিঠু স্যার মানে !!!
--- থাক থাক । আমার কাজ আছে আমি যাই ।
--- যেতে মানা করি নাই । আজ থেকে তিন মাস মনে থাকে যেন ।
সানু চলে গেল । মিঠু কোন সিদান্ত নিতে পারলো না। এমন করে তিন মাস শেষ । সত্যি সানুর বিয়ে ।পাশাপাশি মহল্লা হওয়ায় মিঠু কাছে খবর চলে আসলো । হাত থেকে সিগারেট ফেলে সানুর বাসায় গেল । কিন্তু সানুর বাসার লোক জন বলল সানু দেখা করবে না। মিঠু কে চলে যেতে বলল ।
আজ  সত্যি মিঠুর মন অনেক খারাপ নিজ ঘরে কান্না করছে । কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ।  চাকুরি টা থাকলে হয়ত আজ সানু তাকে বিয়ে করত ।
পরের দিন রাত নয়টা । মিঠু  তাঁর মাকে নিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে একটু চেকাপ করাতে এমন সময় দেখলও ঐ চাকুরি দেয়া ছেলে টা তাঁর বাবা কে নিয়ে এসেছে ডাক্তার দেখাতে । মিঠু কে দেখে ঐ সে জড়িয়ে ধরল । তাঁর বাবা কে বলল যে চাকুরীটা মিঠু ই তাকে দিয়েছে । ভদ্র লোক মিঠু জড়িয়ে ধরে বলল বাবা তুমি আমাদের পরিবার কে বাচিয়েছ । আমি নামাজ পড়ে সারা জীবন তোমার জন্য দোয়া করব । মিঠু র মাকে বলল - আপা আপনি দেখবেন একদিন আপনার ছেলে আপনার মুখ উজ্জল করবে । মা মিঠু কে জড়িয়ে বলল- বাবা দুঃখ না পেলে জীবন কেমন টা বুঝা যায় না। সামনে তোমার সুন্দর জীবন । মিঠু চিন্তা করল যাক আমি একা দুঃখ পেলাম কিন্তু একটা গোটা পরিবার তো সুখি হল ।।

0 comments:

Post a Comment