Thursday, May 14, 2015

নীরব ঘাতক ................................. একটি গল্প



মেয়েটির নাম কাজল এ যেন গরিবের ঘরে চাদের আলো । বয়স আর কত পনের কিন্তু এ বয়সে সে সবার চোখে পড়ার মত মেয়ে । এ বছর ক্লাস নাইনে পরে । কাজলের একমাত্র ছোট ভাই সাত বছরের তনু সারা দিন বোনের সাথে ঝগড়া লিগেই থাকে । কাজলের মা আছে কিন্তু বাবা  থেকেও না থাকার মত ।
কাজলের মামারা কাজলদের বেশির ভাগ দেখা শুনা করে । এখনো কাজলের বাবার ভিটায় থাকে । কজল খুব শান্ত মেয়ে । স্কুলে বিনা বেতনে পরে ভাল ছাত্রি আর উপ বৃত্তি টাকাও পায় । কাজলের মায়ের খুব সখ মেয়ে যদি এস এস সি পাশ করে তবে তাকে নার্সিং এ ভর্তি করে দিবে । পাশের একটা রাইস মিলে কাজ করে কাজলের মা । শরীর টা ভাল না কয়দিন যাবত । তাই কাজে যেতে পারে নাই । রাইস মিলের মালিক
বাতেন মিয়া আবার খুব আদর করে কাজলের মাকে । কারন সে খুব পরিশ্রমী ও কাজে ফাকি দেয় না । ঈদেরর দিন গুলোতে বা বিশেষ দিনে কাজলের মা আবার বাতেন সাহবের বাড়িতে কাজ করতে যায় । বাতেন সাহেবের স্ত্রী কাজলের মা মানেই শান্তি ।
রাতে কাজল আর তনু পড়ছে এমন সময় তনু বলে আপু
... তুমি এত পড় কেন তোমার জন্য আমাকেও বেশি পড়তে হয় ।
... আমার বেশি পড়া তাই বেশি পড়ি ।
--- তাহালে বলছ আমার কম পড়া । ওকে আমি উঠছি ।
---- কাজল তনুর চুল ধরে বলে ফাকি বাজি । আমার সাথে পড় ।
---- তোমার সাথে পরে কই হবে । মা বলেছে তুমি নার্স হবা । আমি ছেলে ।মা বলেছে ছেলেরা নাকি নার্স
       হয় না ।
 ---- তাহালে তুই কি হবি
---- ট্রাক ড্রাইভার
---- এটা হলে কি হবে
--- কি হবে মানে তাহালে মাকে আর ট্রাক থেকে ধান নামাতে হবে না। দেখিনা । সবাই ট্রাক ড্রাইভারে
     অস্তাদ ডাকে ।আর তোমারে বিয়া দিলে আমি গাড়ি নিয়া আনতে জামু । সবাই কইব তুমি ওস্তাদের
     বোন ।
কাজল ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে আমার লক্ষ্মী ভাই যাও আর পড়তে হবে না । কজলের মা ও হাসে ছেলের কথা শুনে । বলে আল্লাহ্‌ তোমার আশা পুন্য করুক । অনেক সুন্দর গাড়ি যেন চালাইতে পার বাবা তুমি ।

কাজলের মাকে  আজ বাতেন সাহেব বলল-- শুনছ কাজলের মা  কালকে আমার মেয়ে কে দেখতে লোক জন আসবে । সুনলাম তোমার কাজল হাতে খুব সুন্দর মেহেদি দিতে পারে । তোমার ছেলে মেয়ে কে নিয়া কালকে সকালে আমার বাড়িতে চলে আইস । তোমার ভাবী কিন্তু তোমার অপেক্ষা করবে । তুমি যাওয়া মানে তোমার ভাবির হাই প্রেসার লো হবে । কাজলের মা  বলে - ভাই জান সকালেই আসব , ভাবীকে চিন্তা করতে মানা কইরেন ।
খুব সকালে কাজল আর তনু কে নিয়ে কাজলের মা চলে আসে বাতের সাহেবের বাড়ি । কত কাজ করছে মা । কাজল চেয়ে চেয়ে দেখছে  মায়ের কষ্ট । কিন্তু কাজল লক্ষ্য করল বাতের সাহেবের মেয়ে কাজল কে বেশি একটা পছন্দ করছে না। কারন কাজল দেখতে  তার  চেয়ে অনেক সুন্দর । তনু বলল - আপু চল আমারা  আমাদের বাসায় যাই । এখানে ভাল লাগে না। এমন সময় একটা ছেলে পিছন থেকে বলল -
কি নাম তোমার-  আমার নাম তনু
সাথে কে তোমার - আমার বোন কাজল আপু
বা দারুণ তো চাদের আলোর নাম কাজল
আই কাজল এই দিকে আসো আমি বাতেন সাহেবের ছেলে আমার নাম রাজিব
-- সালাম নিবেন ভাইজান
-- হুম নিলাম কোথায় বাড়ি
-- আপনাদের রাইস মিল থেকে একটু সামনে
-- হুম কি কর
-- আমি ক্লাস নাইনে সাইন্সে পড়ি আর আমার মা হলেন ঐ যে উনি ।
-- রাজিব আর বুঝতে অসুবিধা হল না যে সে খুব গরিব ঘরের মেয়ে ।
রাতে মায়ের সাথে  কাজল আর তনু বাসায় ফিরল । সারা রাস্তা তনু বলল ঐ বাড়িতে রাজিব ভাই অনেক ভাল । আমাকে অনেক আদর করেছে ।  কাজলের মা  বলল- রাজিব ছেলেটা বাপের মত ভাল হয়েছে । কাজল হাসতে হাসতে বলল মা আসলেও ছেলেটা ভাল কি সুন্দর করে কথা বলে । আমাকে বলল - শুন কাজল আমাকে লজ্জা পাবে না । লেখা পড়ার কোন কিছু লাগলে আমাকে বলবে ।
প্রায় স্কুলের আশা যাওয়ার পথে কাজলের সাথে দেখা হয় রাজিবের । মাঝে মধ্য কথা হয় । রাজিব ধীরে ধীরে কাজল কে বুঝতে লাগল ধনি গরিব সব মানুষ সমান । এক বছরের মধ্য রাজিবের প্রেমে পরে গেল কাজল । দিনে দিনে দুজনের প্রেমের গভীরতা বাড়তে লাগলো । কাজলের মা অনেক রাত পর্যন্ত রাইস মিলে কাজ করে । প্রায় পড়ানোর জন্য আসে রাজিব । তনু খুব খুশি হয় রাজিব আসলে কারন তনুর জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে রাজিব ।
বিকাল থেকে বৃষ্টি পরছে সন্ধ্যায় রাজিব আসছে কাজলের বাসায় । অন্য দিন অবশ্য পড়ার টেবিলে তনু থাকে আজ কিন্তু তনু ঘুমাচ্ছে। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে বিদ্যুৎ নাই । হারিকেনের আলো  জলছে রাজিব
কাজলের হাত ধরে হালকা আদর করছে । এক সময় আর কাজল নিজেকে সামলাতে পারলো না । রাজিব ভালবাসার ছলে পেয়ে গেল কাজলের  শরীর । কাজল বিশ্বাস করল রাজিব কে । কিন্তু তিন মাসের এই  কাজল অনুভব করল যে সে কনসিপ করে ফেলেছে । মাঝে মাঝে বমি হচ্ছে । মেয়ের শরীর যে খারাপ মা একটু একটু টের পাছে কিন্তু কি হয়েছে সে জানে না ।
রাজিব কে কাজল খুলে বলল যে সে গর্ভবতী এ কথা শুনে রাজিব বলল -
--- বল কি? কাল সকালে আমার সাথে চল ক্লিনিকে এখন বাচ্চা রাখা যাবে না ।
--- কাজল বলল- শুন রাজিব এটা কেমন কথা । তুমি না বললে আমি যখন চাইব তখনই তুমি মাকে বিয়ে করবে ।
--- কাজল পাগলামি কর না সামনে আমার অনার্স পরীক্ষা । একটা বাচ্চা নষ্ট করলে কিছু হবে না ।
--- না রাজিব আমার জীবন থাকতে আমি বাচ্চা নষ্ট করব না । এই কথা শুনা মাত্র রাজিব কাজলের গালে চর মারে আর বলে-
সব ছোট লোক এক যাতের । যাও আমার কথা না শুনলে কিন্তু তোমার ক্ষতি হবে । আমার বাবা হয়ত আমাকে বকাজকা করবে । কিন্তু এমন খারাপ মেয়ে কে কি মেনে নিবে। আর এ বাচ্চা যে আমার তার কোন প্রমান তোমার কাছে নাই । এই বলে রাজিব চলে যায় , দূর থেকে ছোট তনু দেখল যে বোন কাঁদছে । তনুও বুঝতে পারলো যে আমার বোন কোন কষ্ট পেয়েছে । তনু বোন কে জড়িয়ে ধরে বলল - আপ্পু কান্না করনা । আমি বড় হয়ে রাজিব কে মেরে দিব ।
সারা রাত কান্না করল কাজল । ভাবতে লাগলো সে তার মাকে ঠকিয়েছে । মায়ের আশা নষ্ট করেছে । সবাই যদি জানে কি ভাবে মুখ দেখবে সমাজে । মামারা কি মনে করবে ।
ফজরের আজান মসজিদ থেকে ভেসে আসছে । কাজলের মা নামজের জন্য ঘুম থেকে উঠে মেয়ে কে ডাক দিচ্ছে - কি রে মা কাজল ঘুম থেকে উঠ । কিন্তু কোন শব্দ নাই । মা কাজলের ঘরে ডুকে ও আমার আল্লাহ্‌রে বলে একটা চিৎকার দেয় ।
কাজল আর নাই । চাদের মত কোমল শান্ত সুন্দর মেয়ে গলায় ফাস নিয়েছে ।
সকাল বেলায় আশপাশের সবাই এলো গরিবের মেয়ে চেয়ার ম্যান ও বাতেন সাহেব বলল হয়ত কোন অভিমানে সে ফাসি নিয়েছে । কাজলের মা বোবা হয়ে রইল । থানা ম্যানেস করে চেয়ারম্যান সাহেব আর বাতেন সাহেব কাজল কে মাটি দিল ।
তনু বোনের সাদা খাতায় একটা পুতুলের আঁকা ছবি দেখলও । আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে অনেক দূর সবাই ভুলে গেছে কাজল কে । সাত বছরের তনু এখন ২১ বছরের যুবক । লিখা পড়া তেমন করতে পারে নাই । গাজী পুর তুরাগ পরিবাহনে হেল্পারি করতে করতে এখন পাকা ড্রাইভার ।তনু বাড়িতে আসলেই বাতেন সাহেবের বাড়িতে যাবে । খুব সুন্দর মনের একটা মানুষ । এখন রাইস মেইল দেখা শুনা করে রাজিব ।
রাজিব কে দেখে লম্বা একটা সালাম দেয় তনু ।
---কেমন আছেন রাজিব ভাই
--- আরে তনু যে ভাল আছি তুমি কেমন
--- আমি আপনার দোয়ায় ভাল । রাজিব ভাই আমি জীবনে ছোট বেলায় যে আদর পেয়েছি সেটা আপনার কাছ থেকে ।
---- রাজিব তনু কে কাছে বসায়
---- তনু দেখলও যে রাজিব একটা মাইক্রো কিনেছে । তনু বলল রাজিব ভাই  আমি কিন্তু তিন বছর মাইক্রো চালাইছি । যদি কোন দিন ড্রাইভার চাকরি দেন আমাকে কিন্ত নিবেন । আপনার কাছে থাকলে
আমি কিন্তু ভাল থাকব । তা ছারা নিজের গ্রামে থাকলাম ।
ছয় মাস পর তনুর চাকরি ঠিক হল রাজিবের গাড়ির ড্রাইভার হিসাবে । তনু গাড়ির খুব যত্ন নেয় । তাছারা রাজিবের সব কাজ ও হুকুম ঠিক মত পালন করে । রাজিবের স্ত্রীও তনুকে খুব আদর করে । কিছু দিন আগে রাজিবের বোন ক্যান্সারে মারা যায় । বাতেন সাহেবের একমাত্র ওয়ারিশ এখন রাজিব । রাজিবের স্ত্রীর বড় ভাই রাঙ্গামাটি ফরেস্ট অফিসার । রাজিবের স্ত্রী গর্ভবতী সাত মাসে পরেছে তাই ঠিক করল রাঙ্গামাটি যাবে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে ।  দিন তারিখ ঠিক রাজিব স্ত্রী   কে নিয়ে গাজী পুর কাপাসিয়া থেকে রওনা দিল রাঙ্গা মাটির পথে । চিটাগাং এসে টাইগার পাঁশে একটা হোটেলে দুপুরের খাবার খেল । তনু গাড়ি চালাছে এখন গাড়ি ঠিক বেতবুনিয়া পারি দিয়ে আরও সামনে যাচ্ছে । চার দিক অনেক বড় বড় পাহার আঁকাবাঁকা আর উচু নিচু রাস্তা । চার দিক সবুজ আর সবুজ । রাজিব ও তার স্ত্রী  অবাক হয়ে দেখছে পাহার । গাড়ি চলছে পাহাড়ের চুড়ার দিকে আঁকা বাকা হয়ে ।
রাজিব কে বলল তনু একটা কথা বলি রাজিব ভাই
--- হ্যাঁ তনু বলল কি বলবে ?
--- আল্লাহ্‌ মানুষ কে তার সব আশা পুন্য করে জানেন ।
--- হ্যাঁ জানি তনু । তোমার কি আশা পুন্য হল শুনি
--- এই যে আপনার কাছে থাকা চাকুরি করা
---- এটা তোমার সততার জন্য
---- হ্যা রাজিব ভাই । তবে একটা কথা বলি আমি যখন ক্লাস ওয়ান পড়তাম তখন
    কিন্তু আপনি অনেক সুন্দর ছিলেন । তাই নাই
---- হ্যাঁ পনের ষোল বছর আগের কথা ।
--- তনু বলল ভাবী জানেন । রাজিব ভাই কিন্তু আমার বোন কে পড়াত !
---- তাই নাকি তনু তুমি আগে তো বলনি ।
----  থাক ঐ কথা তনু ।
--- না না রাজিব ভাই  আপনি ভয় কইরেন না । আমি শুধু আজ একটা কথা বলব - রাজিব ভাই
     আপনাকে
--- কি কথা তনু? অন্য সময় সুনব
---- রাজিব ভাই এ রাঙ্গামাটির সব রাস্তা আমার চেনা । আগে হানিফ পরিবহনে কিছু দিন হেল্পারি
      করেছি । আজ কথা তা আপনাকে শুনতে হবে ।রাজিবের  স্ত্রী বলল কি  কথা তনু বল শুনি।
     ভাবী  রাজিব ভাই আমার বোন কে খুব ভালবাসত । আমার অবুঝ বোন টা নার্স হতে চেয়ে ছিল
     কিন্তু রাজিব ভাই এর জন্য হল না ।
--- এ সব কি বলছ তুমি তনু রাজিব চিৎকার করে বলল তোমার মাথা ঠিক আছে
---- তনু হাসতে হাসতে বলে রাজিব ভাই চিৎকার করে লাভ নাই । গাড়ি আমি চালাই । সত্য বলুন
     না হয় এই গাড়ি নিয়ে আমি পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে যাব ।
--- তনু কোন রকম পাগলামি কর না । আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট ।
---- তনু চিৎকার করে বলল কুত্তার বাচ্চা সেই দিন আমার বোন ও প্রেগন্যান্ট ছিল । তুই তাকে
      বিয়ে    করিস নাই বলে গালায় ফাস নিয়েছিল । আজ তোর স্ত্রী প্রেগন্যান্ট খুব মায়া লাগছে তাই না। আমার ও আমার বোনের জন্য সেই দিন মায়া লেগেছিল  বলে--চলন্ত অবস্তায়   
নোহা মাইক্রো গাড়িটা উচু পাহারের উপর থেকে  একদম ছিটকে ফেলে দেয় । হাজার হাজার ফিট ঢালু নিচু পারের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচের দিকে পরতে থাকে । এই গাড়ির সবাই রাজিব তনু ও রাজিবের স্ত্রী মারা যায় ।
 সবাই জানে এটা একটা দুর্ঘটনা মাত্র কিন্তু আসল ঘটনা আজও কেউ জানে না ।

3 comments:

সেলিনা জাহান প্রিয়া said...

পড়ুন

Unknown said...

বাস্তবতার আলোকে চমৎকার গল্প....ধন্যবাদ আপনাকে।

Unknown said...

বাস্তবতার আলোকে চমৎকার গল্প....ধন্যবাদ আপনাকে।

Post a Comment