Saturday, May 30, 2015

নদী কর্ণফুলীর -কাহিনী


বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তীর্ণ জনপদের প্রাণপ্রবাহ বলতে গেলে কর্ণফুলী নদী। যেটি ভারতের লুসাই পর্বতমালার পাদদেশ থেকে বেয়ে রূপসী কর্ণফুলী পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে চট্টগ্রামের বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। বহু বন্ধুর পথ পেরিয়ে আসা কর্ণফুলী চট্টগ্রামের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে উপজীব্য হয়েছে। এই কর্ণফুলীর নামকরণ নিয়ে রয়েছে লোকগাথা, উপকথা, রূপকথা।আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। প্রাচীন কালের সেই রাজার ছিলো একটি মাত্র কন্যা। সেই কন্যাকে রাজা ভালবাসতো ভীষণ। এই কন্যা হাসলে সূর্য উঠতো, কাঁদলে বৃষ্টি নামতো। হাঁটলে বাতাস বইতো, তাকালেই ফুল ফুটতো। এই অপরূপা রাজকুমারী গোসল করতো পাহাড়ি ছড়ার জলে। ঝিরঝিরিয়ে বয়ে যেতো ছড়ার জল। একদিন নদী বেয়ে এক সওদাগর এলো। যুব সওদাগরের নধরকান্তি দেখে রাজকন্যা বিমোহিত। দু’জনের চোখের পলক আর পড়ে না। একে অপরের প্রেমে পড়ে। তারপর দিনগুলো রঙিন আর রাতগুলো স্বপ্নিল হয়ে ওঠে দু’জনের। দিন যায়, মাস যায়। তাদের প্রেমের কথা এক কান, দুই কান করতে করতে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে যুবক সওদাগরের বাণিজ্যের বহর গুটিয়ে অন্যবন্দরে পাল তোলার সময় হয়ে যায়। যুবক সওদাগর যাওয়ার কালে রাজকন্যাকে এই প্রতিশ্র“তি দিয়ে যায় যে, অচিরেই ফিরে এসে তাকে বিয়ে করে বিদেশে নিয়ে যাবে। তার স্মৃতির চিহ্ন হিসাবে রাজকন্যাকে একজোড়া কানের ফুল দিয়ে যুবক সওদাগর অন্যবন্দরের উদ্দেশ্যে পাল তোলে।
তারপর কানের ফুল পরে রাজকন্যা ঘুরে বেড়ায়। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। কিন্তু সওদাগর আর ফিরে আসে না। রাজকন্যা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নদীর তীরে অপেক্ষা করে। রাজকন্যার অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। দিনে দিনে বেড়ে ওঠে বিরহব্যথা।
এদিকে রাজার চোখে ঘুম নেই দেখতে দেখতে তার ছোট্ট মেয়েটি বড় হয়ে গেছে। সুপাত্রে কন্যা দান করতে হবে। অবশেষে দেখে-শুনে রাজা তার কন্যার বিবাহ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যময়। এক কান, দুই কান, করতে করতে খবর শেষে রাজকন্যার কানেও আসে।
রাজকন্যা আর কি করে। বিরহব্যথায় কাতর হয়ে, অবশেষে নদীর পাড়েই কাঁদতে বসে। দিনে দিনে দিন চলে যায়। কান্না আর শেষ হয় না। জীবন থাকতে সওদাগর ছাড়া আর কাউকে মালা দিতে পারবে না রাজকন্যা। এদিকে সওদাগরও আসছে না। একদিন পাগলপারা রাজকন্যার কানের ফুল হারিয়ে যায় নদীর বুকে। খুঁজতে খুঁজতে অস্থির হয়ে পড়ে কন্যা। শেষ পর্যন্ত আর খুঁজে পায় না। রাজকন্যার মনে করে সওদাগর আর আসবে না কোন দিন। কানের ফুল হারিয়ে যাওয়া যেন তারই লক্ষণ।
হতাশ, ক্লান্ত রাজকন্যা আরেক কানের ফুল তীরে খুলে রেখে, গায়ের জড়ানো ওড়না খুলে নদীর বুকে আত্মাহুতি দিয়ে প্রেমের মর্যাদা দেয়। সকলেই পরের দিন এসে দেখে রাজকন্যার ওড়না আছে, কানের ফুল আছে কিন্তু রাজকন্যা নেই। কিছুই বুঝতে আর বাকী থাকে না কারো। রাজকন্যা আর নেই। শোকে পাথর হয়ে রাজাও রাজ্য ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকে এই নদীর নাম হয়ে যায় কর্ণফুলী।

0 comments:

Post a Comment