Friday, May 29, 2015

ধূমপান ত্যাগের গল্প .......................গল্প নয় সত্য



ইমুর খালত বোনের নাম কুমকুম । ইমুর চেয়ে বছর দশেকের বড় ! সেই হিসাবে ইমুর ভগ্নীপতি বা দুলাভাই হয় সামু সিকদার । করিম গঞ্জ উপজেলায় সিকদার বংশের বেশ নাম ডাক । সামু সিকদারের টাকা পায়সা ও মান সম্মান বেশ ভাল । এখন বয়স প্রায় ৪২ বছর । কিন্তু তার সিগারেটের নেশা খুব। বাংলা ফাইভ সিগারেট থেকে তার হাতেখড়ি এখন অবশ্য ব্যান্ড সন্স সিগারেট খায় । অনেক বার সে কিরা কসম খেয়েছে যে আর সিগারেট খাবে না কিন্তু কিছু লাভ হয় নাই, যে লাউ সেই কদু । গ্রীষ্মের ছুটিতে ইমু তার গ্রামের বাড়িতে । ইমুর ছোট মামার মাসায় আজ দুপুরে দাওয়াত । তাই অনেক দিন পর খালাত ভাই বোনদের সাথে দেখা হল ইমুর। এর মধ্য কুমকুম ইমু কে ডাকে বলল- কিরে ইমু তুই নাকি মানুষের মন নিয়া লেখা পড়া করিস , দেখ তোঁ তোর দুলাভাইকে ডাক্তার নিষেধ করেছে সিগারেট খাইতে কিন্তু সে তা ছারতে পারে না। আসলে সিগারেট ছারবে কি না ?
ইমু বলল আপু এভাবে সে সিগারেট ত্যাগ করবে না। মানুষ জানে পাপ করলে শাস্তি পাবে কিন্তু দেখ মানুষ সব চাইতে বেশি পাপ করে । আগে জানতে হবে সে মন থেকে চায় কি না ! এর মধ্য সামু দুলাভাই বলল হ্যাঁ ইমু মন থেকে চাই কিন্তু পারি না।
এখন ইমু বলল দেখুন দুলাভাই সব কাজের পিছনে একটা বাজেট লাগে । একটা প্রফাইল লাগে । এখন দুলা ভাই বলুন আপনি যে সিগারেট ছাড়তে চান তার জন্য বাজেট কত। আপনার বাজেট মত আপনার জন্য প্রফাইল বানান হবে।
দুলাভাই এই সামান্য কাজে আবার বাজেট প্রফাইল ।
ইমু বলল কাজ যদি সামান্য হবে, তাহালে তোঁ আপনি ছাড়তে পারতেন ? যে হে তুঁ আপনি তা ছাড়তে পারেন নাই । তাই কাজটা কি সামান্য বলা ঠিক ?
সবাই একসাথে বলল- না কাজটা সামান্য না ।
দুলাভাই বলল - এখন ইমু তোমার বাজেট বল । দুলাভাই বাজেট তোঁ আপনি বলবেন তবে আপনি এক বছরের সিগারেটের টাকা অ্যাডভান্স দিবেন । দুলা ভাই বলল কত।
ইমু বলল আপনি রোজ কত টাকার সিগারেট খান বলুন ।
দুলাভাই বলল গড়ে ৩০০ টাকা ।
ইমু ওকে ৩০০@৩৬৫=১০৯৫০০ টাকা ওকে । আপনি ৭০% এডভান্স করেন আগামী সাপ্তাহে আপনি সিগারেট ছেরে দিবেন । বিকালেই ইমুর হাতে টাকা চলে আসলো । ইমু প্রফাইল বানিয়ে কাজ শুরু করল । কুমকুম আপুকে বলল ইমু- আগামী সুক্রবার তোমাদের বাড়িতে আমি ও আমার লোক জন আসবো ।
যথা সময় লোক জন নিয়ে ইমু চলে আসলো । কুমকুম আপা তো অবাক ডেকোরেটর চেয়ার বাবুর্চি সকাল ছটায় কাজ শুরু করলো। একদম বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান। এর মধ্য একদল মুন্সি চলে আসলো সবাই বসে আল কোরআন পড়তে লাগলো । সাত টা খাসি জবাই হল । মাইকে কোরআন তেলয়াত চলছে । সামু সিকদার তো অবাক যে ইমু কি শুরু করল । দুপুরের মধ্য সামু সিকদার লক্ষ্য করলো যে তার সব আত্মীয় সজন যেমন চাচারা মামারা ফুফু ফুফা ভাই বোন বোনের জামাই , শ্বশুর বাড়ির লোক জন আসা শুরু করলো । বাড়িতে ইদের আনন্দ । দুপুরের নামজ শেষ ইতি মধ্য করিম গঞ্জ সদরের পেশ ইমান সহ পাশের মসজিদের ইমাম গণ চলে আসছে । এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার ও বয়স্ক মুরুব্বিরা চলে আসছে দাওয়াত খেতে ।
সবাই খাবার টেবিলে বসল ইমন সময় পেশ ইমাম সামু সিকদার কে ডেকে বলল আমি জনাব ইমুর কাছে সব সুনেছি যে আপনি ধূমপান ছাড়তে চান তাই এই আয়োজন । খুব মহৎ কাজ । ইমাম সবার সামনে সামু শিকদার কে এই বলে তওবা করালও যে... আমি তওবা করছি আল্লাহর নামে এই পবিত্র কুরান ছুঁয়ে উপস্থিত আমার স্ত্রী পুত্র কন্যা ভাই বোন মা ও আমার প্রতিবেশী সম্মানী এলাকা বাসি আমি আজ হইতে আর কোন দিন ধূমপান করিব না । যদি ধূমপান করি তাহালে আমি পবিত্র ধর্ম হইতে খারিজ হয়ে এক জন মুনাফেক হিসাবে গণ্য হব । এবং আমি আজ হইতে ধূমপান ত্যাগ করিলাম । হুজুর সবাইকে নিয়ে একটা বিশাল মোনাজাত করিল । খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই হাসি মুখে বিদায় নিল । ইমু তার বাকি ৩০% পেমেন্ট বুঝে নিল .১৯৯১ সনের থেকে এখন পর্যন্ত সামু সিকদার আর ধূমপান করে নাই ।

0 comments:

Post a Comment