Wednesday, May 6, 2015

একেই বলে অতি চালাকের গলায় দড়ি.......( ছোট গল্প )


.............................................................................. সেলিনা জাহান প্রিয়া


ট্রেনে কি টিকেট লাগে ! কত জন মানুষ ট্রেনে টিকেট কাটে । টিটি কে কিছু টাকা দিলেই ঢাকা । বোকা মানুষ ট্রেনের টিকেট কাটে । খুব গর্ব করে কথা গুলো বলল গফুর মিয়াঁ । গফুর মিয়াঁর বাড়ি কিশোর গঞ্জ , করিম গঞ্জ, জাফ্রাবাদ গ্রামে । ঢাকায় তার বছরে এক দুবার আসতে হয় । তিন বার মেট্রিক ফেইল কিন্তু ভিলেজ রাজনেতি খুব ভাল পারে । পান ও সিগারেট খুব পছন্দ । নিজেদের লোক জনের মামলা এই গফুর মিয়াই চালায়।
ইমুর গ্রীষ্মের ছুটি শেষ - গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা আসবে বাতেন রিক্সা নিয়া আসছে । ইমু রিক্সায় উঠে বলল আমলি তলায় একটু দাড়িও এক কাপ চা খেতে হবে । বাতেন সাথে উঠল ।  আমলি তলা নুরু মিয়াঁর চায়ের দোকানের চা ইমুর খুব পছন্দ । চায়ে চুমুক দিতেই গফুর মিয়া কি নাতি কেমন আছ । ইমু বলল ভাল । আপনি ভাল আছেন - হ্যাঁ আমি ভাল তা কোথায় যাও ।
-- আমি ঢাকায় যাচ্ছি
-- ও ভাল আমি তো আজ ঢাকা যাব । বাসের অপেক্ষায় আছি
-- বাসে ঢাকা যাবেন
-- না নাতি যাব ট্রেনে । আর এখান থেকে বাসে একরাম পুর । তার পর রেল ষ্টেশন ।
--- ও তাহালে আমার সাথে ঐ পর্যন্ত রিক্সায় চলেন। যেতে যেতে কথা বলা যাবে । গফুর মিয়া বলল তাহালে তো নাতি ভালই হয় । এই বলে ইমুর রিক্সায় উঠলো গফুর মিয়া । রিক্সায় উঠে বলল -  নাতি তো দেশের বাহিরে পড়া লিখা কর তাই না । সুনলাম তুমি নাকি সব ধর্ম নিয়া খুব ভাল ভাবে চর্চা কর । কিন্তু তুমি নাতি মুসলমানের সন্তান । তাই নিজের ধর্মের দিকে খেয়াল রাখিও , । ইমু একটু হেসে বলল - দাদা সকল ধর্ম  মানুষ কে শান্তির কথা বলে। ভাল কাজ করতে বলে । তবে প্রেক্ষা পট হয়ত ভিন্ন । এই কথায় কথায় পাচ মেইল রাস্তা এক সাথে চলে আসলো । ইমু টিকেট কেটে নিল ।আর বলল-
কি দাদা টিকেট নিবেন না ।
-- নাতি সবার টিকেট লাগে না ।
-- তাই নাকি দাদা , যদি রাস্তায় সমস্যা হয় ।
-- না, নাতি কোন সমস্যা হবে না । তোমার ভয় বেশি তুমিই কাট । ইমু মনে মনে একটু হাসল- এই লোক রাস্তায় আমাকে কত হাদিস শুনাইল কিন্তু নিজেই একটা বটপার ।তখন বছর তিনেক হল ইন্টার সিটি ট্রেন চালু হয়েছে ।  ঢাকা থেকে কিশোর গঞ্জ একটাই মাত্র ইন্টার সিটি ট্রেন -নাম এগার সিন্দুর । যাই হোক ইমুর পাশেই এসে বসল গফুর দাদা । তখন মাত্র ৪৫ টাকা টিকেট । সন টা ১৯৮৭ সালের দিকে ।
যাই হোক ট্রেন ছাড়ল । ইমু জানতে চাইল তা দাদা ঢাকা কেন ? গফুর মিয়া বলতে লাগলো কিছু মামলা আছে জমিন নিয়া আর কিছু ব্যক্তি গত কাজ আছে । নাতি চা খাবে ? ইমু অন্য দিনের মত হেসে না দাদা কিছু খাব না। ইতিমধ্য টিটি আসলো ইমু টিকেট দেখাল । গফুর মিয়া ১০ টাকা দিল , টিটি চলে গেল । তার পর দেখলাম পুলিশ কে ১০ টাকা দিল নরসিংদী আসার একটু আগে । এখন ইমুর দিকে চেয়ে বলল , এই পুলিশ ভাই বিমান বন্দর গিয়ে আমাকে  একটা টিকেট দিবে । বাজি মাত ২০ টাকায় ঢাকা । কমলা পুর থেকে ৬ নাম্ভার বাসে আটআনা দিয়া গুলিস্তান । ইমু আবার ও হেসে বলল দাদা আপনি পারেন ও ।
টঙ্গি আসার পর ট্রেন থামল সাধারণত টঙ্গি ট্রেন থামে না । সবাই ছুটাছুটি  করছে । ইমু কিছুটা অবাক হল । গফুর মিয়া বলে নাতি কিছু না । মানুষ একটু মজা করে সিগন্যাল পাইছে নামবো ।
কিন্তু সেই দিন মোবাইল কোট বসেছিল টঙ্গি । গফুর মিয়াঁর টিকেট চাইলো ম্যাজিস্ট্রেট । গফুর মিয়া বলল - টিটি কে টাকা দিয়েছি । ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ৩০০ টাকা ফাইন করলো । গফুর মিয়া ম্যাজিস্ট্রেট কে বুঝাতে চাইল যে সময়ের জন্য টিকেট করতে পারে নাই । ইমু বসে বসে দেখছিল গফুর মিয়াঁর মুখ খানা । মোবাইল কোটে বেশি কথা বললে জরিমানা বাড়তে থাকে । গফুর মিয়র ৩০০ টাকার ফাইন ৯০০ টাকায় গড়াল । গফুর মিয়াঁর কাছে এত টাকা নাই । ইমুর কাছে বলল - নাতি তুমি আমারে ৮০০ টাকা দাও । আমি ঢাকায় গিয়ে দিচ্ছি । ইমু বলল- এত টাকা দেয়ার মত টাকা নাই । আসলে ইমুর পকেটে টাকা ছিল । কিন্তু ইমুর মনে হল এই বাটপার টার একটু সাস্তি হওয়ার দরকার । তাই ইমু আবার ও হেসে বলল- দাদা আমি ছাত্র মানুষ। এত টাকা কি সাথে থাকে । গফুর মিয়া কে পুলিশ হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে নিয়ে গেল । পরে ইমু জানতে পারলো যে ৭ দিন জেল খেটে প্রায় ৯০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছারা পেয়েছে ।
 একেই বলে অতি চালাকের গলায় দড়ি...........................।।

0 comments:

Post a Comment